ঢাকা ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাদির মৃত্যু মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষতির কারণে

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:৪৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫০৮ বার পড়া হয়েছে

জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় মারা গেছেন। দেশে সরকারি ও সর্বোচ্চ মানের বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, ম্যাসিভ ব্রেন টিস্যু ইনজুরি বা মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতই হাদির মৃত্যুর প্রধান কারণ।
চিকিৎসকরা জানান, খুব কাছ থেকে গুলি করায় হাদির মস্তিষ্কে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। এ ধরনের আঘাতে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশই প্রাণ হারান। ফলে শুরু থেকেই ক্ষীণ আশা নিয়েই তার চিকিৎসা চলছিল।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় রিকশায় থাকা অবস্থায় পেছন থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলি মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিউরো সার্জারিতে বিশেষায়িত এই আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে তার একটি অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। তবে মস্তিষ্কের অতিমাত্রায় ক্ষতির কারণে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হয়নি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
জুলাই বিপ্লব চলাকালে হাদির মতো মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত নিয়ে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে বহু আহত রোগী ভর্তি হন। তবে তাদের বড় অংশকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নিউরোট্রমা সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান।
ওসমান হাদির চিকিৎসা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৯০ ভাগই মারা যায়। গুলির গতিবেগ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় তা সরাসরি মস্তিষ্কে আঘাত হানে। গুলি যদি তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় না লাগে, তাহলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। হাদির ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাদির ব্রেন স্টেম ইনজুরি হয়েছিল, সঙ্গে ছিল ডিফিউজ বা ম্যাসিভ ব্রেন টিস্যু ইনজুরি—অর্থাৎ মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতি। দেশে চিকিৎসার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও বিশ্বের অন্যতম সেরা নিউরো চিকিৎসাকেন্দ্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, যেন পরিবার বা দেশের কেউ বলতে না পারে যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়নি।’
হাদির চিকিৎসায় দেশে ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বোর্ড একাধিকবার তার সিটি স্ক্যান পর্যালোচনা করে। অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান জানান, দীর্ঘ সময় ধরে হাদির মস্তিষ্ক ফুলে ছিল, যার ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থাই রোগীর জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হার মানেন জুলাই বিপ্লবের এই সাহসী যোদ্ধা।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার করবে জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান

হাদির মৃত্যু মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষতির কারণে

আপডেট সময় ০৯:৪৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় মারা গেছেন। দেশে সরকারি ও সর্বোচ্চ মানের বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, ম্যাসিভ ব্রেন টিস্যু ইনজুরি বা মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতই হাদির মৃত্যুর প্রধান কারণ।
চিকিৎসকরা জানান, খুব কাছ থেকে গুলি করায় হাদির মস্তিষ্কে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। এ ধরনের আঘাতে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশই প্রাণ হারান। ফলে শুরু থেকেই ক্ষীণ আশা নিয়েই তার চিকিৎসা চলছিল।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় রিকশায় থাকা অবস্থায় পেছন থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলি মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিউরো সার্জারিতে বিশেষায়িত এই আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে তার একটি অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। তবে মস্তিষ্কের অতিমাত্রায় ক্ষতির কারণে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হয়নি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
জুলাই বিপ্লব চলাকালে হাদির মতো মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত নিয়ে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে বহু আহত রোগী ভর্তি হন। তবে তাদের বড় অংশকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নিউরোট্রমা সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান।
ওসমান হাদির চিকিৎসা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৯০ ভাগই মারা যায়। গুলির গতিবেগ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় তা সরাসরি মস্তিষ্কে আঘাত হানে। গুলি যদি তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় না লাগে, তাহলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। হাদির ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাদির ব্রেন স্টেম ইনজুরি হয়েছিল, সঙ্গে ছিল ডিফিউজ বা ম্যাসিভ ব্রেন টিস্যু ইনজুরি—অর্থাৎ মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতি। দেশে চিকিৎসার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও বিশ্বের অন্যতম সেরা নিউরো চিকিৎসাকেন্দ্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, যেন পরিবার বা দেশের কেউ বলতে না পারে যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়নি।’
হাদির চিকিৎসায় দেশে ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বোর্ড একাধিকবার তার সিটি স্ক্যান পর্যালোচনা করে। অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান জানান, দীর্ঘ সময় ধরে হাদির মস্তিষ্ক ফুলে ছিল, যার ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থাই রোগীর জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হার মানেন জুলাই বিপ্লবের এই সাহসী যোদ্ধা।