ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিরপরাধ মানুষ হত্যা পৃথিবীকে হত্যার সমতুল্য

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১২:৫৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫২২ বার পড়া হয়েছে

 

মানুষের জীবন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি মহান নিয়ামত। ইসলাম জীবনের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। অন্যায়ভাবে কারও জীবন নেওয়া এক ভয়াবহ পাপ, যা শিরকের পর সবচেয়ে বড় অপরাধ।

 

 

ইসলামে রক্তের সম্মান : রাসূল (সা.) বলেন, ‘একজন মুমিনের রক্ত ও তার সম্মান-সম্পদ অপর মুমিনের ওপর হারাম’। (সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪)। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ এবং সম্মান একে অপরের জন্য এতটাই পবিত্র, যতটা পবিত্র এই দিন, এই মাস, এবং এই শহর’। (সহিহ মুসলিম : ১৬৭৯) এমনকি বাইতুল্লাহর চেয়েও অধিক সম্মান একজন মুমিনের জীবনের। হজরত ইবনে উমর (রা.) কাবাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : ‘তুমি কত মর্যাদাবান! তবে একজন মুমিনের সম্মান আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও বেশি’। (তিরমিযী : ২০৩২)।

 

এ হত্যা পুরো মানবজাতির হত্যা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল’। (সূরা মায়িদা : ৩২)।

 

 

সবার আগে হত্যার বিচার : রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়টির বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত’। (সহিহ বুখারি : ৬৫৩৩)। এমনকি নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর মাথার চুল ধরে টেনে নিয়ে আসবে আল্লাহর দরবারে। কণ্ঠনালিতে তখনো রক্ত ঝরবে। সে বলবে ‘হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে’। (তিরমিযি : ৩০২৯)।

 

হত্যার পরিণতি, জাহান্নাম ও আল্লাহর গজব : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার প্রতিদান জাহান্নাম, যেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হবেন, তাকে লানত দেবেন এবং আল্লাহ তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন’। (সূরা নিসা : ৯৩)। এক হাদিসে এসেছে, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলেই মিলে একজন মুমিনকে হত্যা করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’। (তিরমিযি : ১৩৯৮)।

 

 

শুধু শরিয়তের অধীনে সীমিত হত্যা বৈধ : ইসলাম কেবল তিনটি কারণে শাস্তি স্বরূপ কাউকে হত্যার অনুমতি দেয়, যা একমাত্র শরিয়তের বিচারব্যবস্থার অধীনে হতে পারে, (এক) ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করা হলে, হত্যাকারীকে কিসাসের বিধানে। (দুই) বিবাহিত ব্যভিচারীকে। (তিন) মুরতাদকে। (সহিহ মুসলিম : ১৬৭৬)।

 

হাত্যাকারীর শাস্তি দুনিয়াতেই শুরু : রাসূল (সা.) একজন মুমিন দ্বীনের প্রশান্তি ভোগ করে, যতক্ষণ না সে কোনো রক্তপাত ঘটায়। (সহিহ বুখারি : ৬৮৬২)। অন্য হাদিসে বলা হয়, ‘যে অবৈধভাবে রক্তপাত করে, সে এমন এক বিপদের মুখে পড়ে, যার থেকে মুক্তির পথ নেই’। (সহিহ বুখারি : ৬৮৬৩)।

 

 

হত্যাকারীর আমল বিফল হয়ে যাবে : রাসূল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সব মানুষ তার সব আমল নিয়ে যাবে এবং তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার পাওনাদার রয়ে যাবে। অতঃপর পাওনাদারদের গোনাহগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। আর পাহাড়সম গোনাহ নিয়ে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে।

 

আমাদের করণীয় : অতএব, আমাদের বুঝতে হবে বিদ্বেষ, হিংসা, জুলুম ও রক্তপাত কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে হলে, আমাদের শুধু নিজেরাই অন্যায় থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়; বরং অন্যদের বিরত রাখার চেষ্টাও করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ এ দুটিই ইমানের দাবি। যখন কেউ কারও ওপর জুলুম করে বা কাউকে হত্যা করে, তখন একজন প্রকৃত মুসলমানের দায়িত্ব হয় জুলুমের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, নিহতের পরিবারকে সহানুভূতি ও ন্যায়ের সহায়তা দেওয়া এবং হত্যাকারীর পক্ষে নীরব বা পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়া।

জনপ্রিয় সংবাদ

নিরপরাধ মানুষ হত্যা পৃথিবীকে হত্যার সমতুল্য

নিরপরাধ মানুষ হত্যা পৃথিবীকে হত্যার সমতুল্য

আপডেট সময় ১২:৫৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫

 

মানুষের জীবন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি মহান নিয়ামত। ইসলাম জীবনের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। অন্যায়ভাবে কারও জীবন নেওয়া এক ভয়াবহ পাপ, যা শিরকের পর সবচেয়ে বড় অপরাধ।

 

 

ইসলামে রক্তের সম্মান : রাসূল (সা.) বলেন, ‘একজন মুমিনের রক্ত ও তার সম্মান-সম্পদ অপর মুমিনের ওপর হারাম’। (সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪)। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ এবং সম্মান একে অপরের জন্য এতটাই পবিত্র, যতটা পবিত্র এই দিন, এই মাস, এবং এই শহর’। (সহিহ মুসলিম : ১৬৭৯) এমনকি বাইতুল্লাহর চেয়েও অধিক সম্মান একজন মুমিনের জীবনের। হজরত ইবনে উমর (রা.) কাবাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : ‘তুমি কত মর্যাদাবান! তবে একজন মুমিনের সম্মান আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও বেশি’। (তিরমিযী : ২০৩২)।

 

এ হত্যা পুরো মানবজাতির হত্যা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল’। (সূরা মায়িদা : ৩২)।

 

 

সবার আগে হত্যার বিচার : রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়টির বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত’। (সহিহ বুখারি : ৬৫৩৩)। এমনকি নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর মাথার চুল ধরে টেনে নিয়ে আসবে আল্লাহর দরবারে। কণ্ঠনালিতে তখনো রক্ত ঝরবে। সে বলবে ‘হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে’। (তিরমিযি : ৩০২৯)।

 

হত্যার পরিণতি, জাহান্নাম ও আল্লাহর গজব : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার প্রতিদান জাহান্নাম, যেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হবেন, তাকে লানত দেবেন এবং আল্লাহ তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন’। (সূরা নিসা : ৯৩)। এক হাদিসে এসেছে, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলেই মিলে একজন মুমিনকে হত্যা করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’। (তিরমিযি : ১৩৯৮)।

 

 

শুধু শরিয়তের অধীনে সীমিত হত্যা বৈধ : ইসলাম কেবল তিনটি কারণে শাস্তি স্বরূপ কাউকে হত্যার অনুমতি দেয়, যা একমাত্র শরিয়তের বিচারব্যবস্থার অধীনে হতে পারে, (এক) ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করা হলে, হত্যাকারীকে কিসাসের বিধানে। (দুই) বিবাহিত ব্যভিচারীকে। (তিন) মুরতাদকে। (সহিহ মুসলিম : ১৬৭৬)।

 

হাত্যাকারীর শাস্তি দুনিয়াতেই শুরু : রাসূল (সা.) একজন মুমিন দ্বীনের প্রশান্তি ভোগ করে, যতক্ষণ না সে কোনো রক্তপাত ঘটায়। (সহিহ বুখারি : ৬৮৬২)। অন্য হাদিসে বলা হয়, ‘যে অবৈধভাবে রক্তপাত করে, সে এমন এক বিপদের মুখে পড়ে, যার থেকে মুক্তির পথ নেই’। (সহিহ বুখারি : ৬৮৬৩)।

 

 

হত্যাকারীর আমল বিফল হয়ে যাবে : রাসূল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সব মানুষ তার সব আমল নিয়ে যাবে এবং তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার পাওনাদার রয়ে যাবে। অতঃপর পাওনাদারদের গোনাহগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। আর পাহাড়সম গোনাহ নিয়ে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে।

 

আমাদের করণীয় : অতএব, আমাদের বুঝতে হবে বিদ্বেষ, হিংসা, জুলুম ও রক্তপাত কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে হলে, আমাদের শুধু নিজেরাই অন্যায় থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়; বরং অন্যদের বিরত রাখার চেষ্টাও করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ এ দুটিই ইমানের দাবি। যখন কেউ কারও ওপর জুলুম করে বা কাউকে হত্যা করে, তখন একজন প্রকৃত মুসলমানের দায়িত্ব হয় জুলুমের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, নিহতের পরিবারকে সহানুভূতি ও ন্যায়ের সহায়তা দেওয়া এবং হত্যাকারীর পক্ষে নীরব বা পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়া।