ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা—৯ মাত্রার কম্পনের সম্ভাবনা

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১২:০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৬১৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরার পাশাপাশি নতুন করে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একের পর এক হালকা ও মাঝারি ধরনের কম্পন অনুভূত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চল এবং কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এলাকা দুটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট—ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল। এ সংযোগস্থলের ওপরের অংশটি দীর্ঘদিন ধরে ‘লকড’ অবস্থায় রয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে। জমে থাকা এই শক্তি যেকোনো সময় ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে মুক্তি পেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।

চলতি বছরে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১০টি হালকা ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কম্পনগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক মাসে ঢাকাসহ সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ৪ থেকে ৫.৫ মাত্রার একাধিক কম্পন রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ১৪ আগস্ট ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ঢাকা ও সিলেটে জুন ও আগস্টে অনুভূত কম্পন জনমনে শঙ্কা বাড়িয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার, আসাম ও মেঘালয়ের সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত ভূকম্পন বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, প্লেটগুলোর মুভমেন্ট প্রতি বছর প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। এই ধারাবাহিক চাপই একসময় ধ্বংসাত্মক কম্পনের জন্ম দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প ঠেকানো সম্ভব না হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয় নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ, জরুরি উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি পর্যায়ে আধুনিক ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।

তুরস্ক-সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লাখো ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার উদাহরণ বাংলাদেশকে এখনই সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় বড় ধরনের ভূমিকম্প কেবল সময়ের অপেক্ষা, আর তাই প্রস্তুতির বিকল্প নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা—৯ মাত্রার কম্পনের সম্ভাবনা

আপডেট সময় ১২:০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরার পাশাপাশি নতুন করে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একের পর এক হালকা ও মাঝারি ধরনের কম্পন অনুভূত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চল এবং কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এলাকা দুটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট—ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল। এ সংযোগস্থলের ওপরের অংশটি দীর্ঘদিন ধরে ‘লকড’ অবস্থায় রয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে। জমে থাকা এই শক্তি যেকোনো সময় ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে মুক্তি পেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।

চলতি বছরে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১০টি হালকা ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কম্পনগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক মাসে ঢাকাসহ সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ৪ থেকে ৫.৫ মাত্রার একাধিক কম্পন রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ১৪ আগস্ট ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ঢাকা ও সিলেটে জুন ও আগস্টে অনুভূত কম্পন জনমনে শঙ্কা বাড়িয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার, আসাম ও মেঘালয়ের সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত ভূকম্পন বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, প্লেটগুলোর মুভমেন্ট প্রতি বছর প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। এই ধারাবাহিক চাপই একসময় ধ্বংসাত্মক কম্পনের জন্ম দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প ঠেকানো সম্ভব না হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয় নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ, জরুরি উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি পর্যায়ে আধুনিক ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।

তুরস্ক-সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লাখো ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার উদাহরণ বাংলাদেশকে এখনই সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় বড় ধরনের ভূমিকম্প কেবল সময়ের অপেক্ষা, আর তাই প্রস্তুতির বিকল্প নেই।