ঢাকা ১২:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলেম পরিবারে বেড়ে ওঠা শহীদ শরীফ ওসমান হাদি, জেনে নিন কে কি করেন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:২১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৩১ বার পড়া হয়েছে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে প্রায় সবাই আলেম ও ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। ছোটবেলা থেকেই কোরআন-হাদিসের শিক্ষায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ হারিয়ে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছেন।

জানা গেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় শহীদ ওসমান হাদির জন্ম। তাঁর বাবা মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশালের গুঠিয়ার একটি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেঝো ভাই মাওলানা ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

ওসমান হাদির তিন বোনের স্বামীরাও আলেম ও শিক্ষক। বড় বোনের স্বামী মাওলানা আমির হোসেন নলছিটি ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার এবং মসজিদের ইমাম। মেঝো বোনের স্বামী মাওলানা আমিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। ছোট বোনের স্বামী মাওলানা মনির হোসেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।

শহীদ হাদির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে তিনি ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি ছিলেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। মেধাবী হাদি ছাত্রজীবনে প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই হাদি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও স্পষ্টভাষী। সুবক্তা হিসেবে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন।

হাদির আন্দোলনজীবনে বড় ভাই শরিফ উমর বিন হাদির ভূমিকা উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুনায়েদ মাসুদ লেখেন, ইনকিলাব মঞ্চের যাত্রা শুরুর পর ব্যাকস্টেজে সবচেয়ে বেশি মেধা ও শ্রম দিয়েছেন উমর বিন হাদি। কো-অর্ডিনেশন, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় তিনি সবসময় গার্ডিয়ানের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির ওপর হামলা চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

শামা ওবায়েদের গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

আলেম পরিবারে বেড়ে ওঠা শহীদ শরীফ ওসমান হাদি, জেনে নিন কে কি করেন

আপডেট সময় ০৮:২১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে প্রায় সবাই আলেম ও ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। ছোটবেলা থেকেই কোরআন-হাদিসের শিক্ষায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ হারিয়ে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছেন।

জানা গেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় শহীদ ওসমান হাদির জন্ম। তাঁর বাবা মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশালের গুঠিয়ার একটি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেঝো ভাই মাওলানা ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

ওসমান হাদির তিন বোনের স্বামীরাও আলেম ও শিক্ষক। বড় বোনের স্বামী মাওলানা আমির হোসেন নলছিটি ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার এবং মসজিদের ইমাম। মেঝো বোনের স্বামী মাওলানা আমিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। ছোট বোনের স্বামী মাওলানা মনির হোসেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।

শহীদ হাদির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে তিনি ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি ছিলেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। মেধাবী হাদি ছাত্রজীবনে প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই হাদি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও স্পষ্টভাষী। সুবক্তা হিসেবে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন।

হাদির আন্দোলনজীবনে বড় ভাই শরিফ উমর বিন হাদির ভূমিকা উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুনায়েদ মাসুদ লেখেন, ইনকিলাব মঞ্চের যাত্রা শুরুর পর ব্যাকস্টেজে সবচেয়ে বেশি মেধা ও শ্রম দিয়েছেন উমর বিন হাদি। কো-অর্ডিনেশন, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় তিনি সবসময় গার্ডিয়ানের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির ওপর হামলা চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।