ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৫:০৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫১৭ বার পড়া হয়েছে

১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এটি শুধু দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ করার মতো ঘটনা নয়। তিনি বলেন, “প্রথম আলো, ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—এই দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। এটি আমাদের জন্য চরম লজ্জার।”
রোববার রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন, রেডিও ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, হামলার বিষয়ে আগে থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থাকার কথা জানা গেছে। “যদি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট থেকে থাকে, তাহলে তা আমলে নেওয়া হলো না কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো সত্ত্বেও এক-দুই ঘণ্টা পর সাড়া দেওয়ার অর্থ কী?”—প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর মতে, এতে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, যা নতুন কিছু নয়। “কিছু স্থাপনা ও নির্দিষ্ট ঠিকানায় মবোক্রেসিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমরা ডেমোক্রেসি চেয়েছিলাম, কিন্তু কেন সেটা মবোক্রেসিতে পরিণত হবে? এটি সরকারের দুর্বলতারই প্রতিফলন,” বলেন তিনি। এ ধরনের সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করার আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
গণতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষের গণপ্রত্যাশা অনেক উঁচু। সবাই পূর্ণ গণতন্ত্র ও তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখতে চায়। “গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, যেন সেগুলো সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে,” বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, তবে দেশের স্বার্থে সবাইকে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। “রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ আমাদের দেয়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই, কিন্তু ফ্যাসিবাদ কী করেছে তা ভুলে যেতে চাই না,” যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ আশা করছে তাঁর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। “দীর্ঘ ১৮ বছর তাঁকে কষ্টকর নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কাজে লাগাতে চাই,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদের সময়ে দেশ এক ঘন অন্ধকারের মধ্য দিয়ে গেছে। শফিক রেহমানসহ অনেক সাংবাদিকের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখনো যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, “একজন তরুণ নেতাকে তাঁর বক্তব্যের কারণে জীবন দিতে হবে—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মতপ্রকাশের কারণে আক্রমণ ফ্যাসিবাদ-উত্তর সময়ে কাম্য নয়।”
মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদারসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবাসী পেশাজীবীদের জন্য বড় সুখবর, হাজারো দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে দুবাই

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

আপডেট সময় ০৫:০৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এটি শুধু দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ করার মতো ঘটনা নয়। তিনি বলেন, “প্রথম আলো, ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—এই দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। এটি আমাদের জন্য চরম লজ্জার।”
রোববার রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন, রেডিও ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, হামলার বিষয়ে আগে থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থাকার কথা জানা গেছে। “যদি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট থেকে থাকে, তাহলে তা আমলে নেওয়া হলো না কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো সত্ত্বেও এক-দুই ঘণ্টা পর সাড়া দেওয়ার অর্থ কী?”—প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর মতে, এতে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, যা নতুন কিছু নয়। “কিছু স্থাপনা ও নির্দিষ্ট ঠিকানায় মবোক্রেসিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমরা ডেমোক্রেসি চেয়েছিলাম, কিন্তু কেন সেটা মবোক্রেসিতে পরিণত হবে? এটি সরকারের দুর্বলতারই প্রতিফলন,” বলেন তিনি। এ ধরনের সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করার আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
গণতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষের গণপ্রত্যাশা অনেক উঁচু। সবাই পূর্ণ গণতন্ত্র ও তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখতে চায়। “গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, যেন সেগুলো সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে,” বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, তবে দেশের স্বার্থে সবাইকে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। “রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ আমাদের দেয়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই, কিন্তু ফ্যাসিবাদ কী করেছে তা ভুলে যেতে চাই না,” যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ আশা করছে তাঁর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। “দীর্ঘ ১৮ বছর তাঁকে কষ্টকর নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কাজে লাগাতে চাই,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদের সময়ে দেশ এক ঘন অন্ধকারের মধ্য দিয়ে গেছে। শফিক রেহমানসহ অনেক সাংবাদিকের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখনো যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, “একজন তরুণ নেতাকে তাঁর বক্তব্যের কারণে জীবন দিতে হবে—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মতপ্রকাশের কারণে আক্রমণ ফ্যাসিবাদ-উত্তর সময়ে কাম্য নয়।”
মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদারসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।