ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের রেশ কাটতে না কাটতেই ইরান মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি নতুন রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ‘কাসেদ’ নামের উৎক্ষেপণযান ব্যবহার করে সাবঅরবিটাল কক্ষপথে সফলভাবে একটি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পদক্ষেপ।
ওয়াশিংটনের এলিয়ট স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহকারী অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সিনা আজোদি বলেন, ইরান এখন শুধু সক্ষমতা বাড়ানোর পর্যায়ে নেই, বরং এমন মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে তারা তাদের সামরিক শক্তির বার্তাও দিচ্ছে। তার মতে, এই উৎক্ষেপণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরোক্ষ উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, যা কোনো সরাসরি সংঘাত ছাড়াই অর্জন সম্ভব।
ইরান অবশ্য দাবি করছে, এটি মহাকাশ গবেষণারই অংশ। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এই দাবিকে মানতে নারাজ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ফক্স বলেন, এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইরান দীর্ঘমেয়াদি সামরিক পরিকল্পনার বার্তা দিচ্ছে এবং বিকল্প পথে সামরিক শক্তি ধরে রাখার কৌশল অনুসরণ করছে।
ওয়াশিংটনের গবেষক ফাতিমা আল-আসরা উল্লেখ করেন, একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সম্ভব, যা এই ধরনের অভিযানের সামরিক তাৎপর্য বাড়িয়ে তোলে।
এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘সোরায়া’ নামের স্যাটেলাইট ‘কায়েম ১০০’ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করেছিল ইরান, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। এবার ‘কাসেদ’ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ আরও একবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দুশ্চিন্তাকে উস্কে দিয়েছে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ারের বিশ্লেষক কাসরা আরাবি বলেন, এই উৎক্ষেপণ ইউরোপের জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করার দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
যদিও যুদ্ধের সময় ইরানের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস হয়, এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইরান এখনো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। বরং, আঞ্চলিক অবস্থান ধরে রাখা এবং প্রভাব বিস্তারের দিকেই তারা আরও দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছে। এই মহাকাশ অভিযান তাই শুধু একটি প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নয়—এটি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইরানের কৌশলগত অবস্থান জানান দেওয়ার বলিষ্ঠ বার্তা