বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশলীনা রিয়াকে।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কাইলানী গ্রামের মেয়ে রিয়া বলেন, “দুপুর ১টার দিকে কলেজ ছুটি হয়। আমরা কোচিং ক্লাসে ছিলাম, আমি জানালার পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ এক বিকট শব্দ শুনি। মনে হলো যেন কিছু একটা ব্লাস্ট হলো। জানালার পাশে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখতে পাই। মনে হচ্ছিল আকাশটা যেন মুহূর্তেই আগুন হয়ে গেল।”
তিনি জানান, তখন সবাই আতঙ্কে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। প্রথমে ধারণা ছিল, ছেলেদের ভবনে কিছু ঘটেছে। কিন্তু নিচে এসে দেখা যায়, শিশুদের ভবনের সামনে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। তখনও কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। কিছু সময় পর পোড়া দেহ একের পর এক বের করে আনতে দেখে চারদিক স্তব্ধ হয়ে যায়।
রিয়া আরও জানান, “বিমানটি শিশুদের ‘স্কাই’ সেকশনের গেটের সামনে পড়ে। প্রতিদিন বাচ্চারা সেই গেট দিয়েই বের হয়। মাত্র ১০ মিনিট পর তাদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো আগুনে ঝলসে যায়।”
এ ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন রিয়া। তার মা-বাবা তাকে দ্রুত গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসেন। এখনও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। প্রতিবেশী অপর্ণা মৈত্র জানান, রিয়া কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না, আতঙ্কে থাকে। আমরাও কিছু জিজ্ঞেস করি না।
রিয়ার মা অরতি মজুমদার, যিনি নিজেও একজন স্কুলশিক্ষিকা, বলেন, “ঘটনার একদিন আগেই মেয়েকে হোস্টেলে রেখে বাড়ি ফিরি। রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘মা, আরেকটা দিন থেকে যাও।’ দুর্ঘটনার পর ও ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলছিল, ‘মা আগুন, আগুন।’ আমি তখন স্কুলে ছিলাম। টিভি খুলে দেখি, কল্পনাও করতে পারিনি এমন ভয়াবহ কিছু ঘটবে।”
রিয়ার বাবা রিপন মৈত্র বলেন, “ফোন পেয়েই আমি ঢাকা রওনা হই। যা দেখেছি, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। ছোট ছোট বাচ্চাদের এমন মৃত্যু চোখে দেখা যায় না। ভাগ্য ভালো যে আল্লাহ আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কত মা-বাবা তাদের সন্তান হারিয়েছেন।”
রিয়াকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন তিনি। তবে সেই বিভীষিকা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি রিয়া। এখনো মাঝেমধ্যে আঁতকে ওঠে, চুপচাপ থাকে, কথাও খুব কম বলে।
এই দুর্ঘটনা শুধু ভবনের কাঠামো নয়, কাঁপিয়ে দিয়েছে অসংখ্য প্রাণের ভেতর। একটি ভয়াবহ দিনের সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে আকাশলীনা রিয়া ও তার মতো আরও অনেকে।