ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘কলরব’ নিয়ে চরম বিতর্ক: শত কোটি টাকার দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠাতার পরিবারে মানবেতর জীবন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:২১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ৫২৫ বার পড়া হয়েছে

জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত সংগঠন ‘কলরব’-কে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন এক বিতর্কের ঝড়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ–এর পরিবার দাবি করেছে, কলরব এখন আর একটি শিল্পীগোষ্ঠী নয়, বরং এটি পরিণত হয়েছে শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্যে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন আজাদের বড় ভাই মো. শামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কলরব ছিল আমার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এটি এখন দুর্বৃত্তদের হাতে পড়ে সম্পূর্ণভাবে লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আজাদ মৃত্যুর আগে কলরবের যেসব গজল ও ইসলামিক সংগীত রেকর্ড করে গেছেন, সেগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানির কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব তৈরি করেছে। কিন্তু সেই আয়ের কোন অংশ আজাদের পরিবার পাননি।

বদরুজ্জামান নামের একজন সাবেক অফিস বয়, বর্তমানে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে সমস্ত আয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, সংগঠনের সকল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম – ইউটিউব, ফেসবুক পেজ, স্পন্সর এবং অনুদানের টাকা – সবই এখন জমা হয় তার মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, “আমার সন্তানরা আজ এতিম। অথচ যারা একসময় অফিস সহকারী ছিলেন, তারা আজ ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রোডাকশন হাউজ, এমনকি হেলিকপ্টারেরও মালিক। এটি শুধু লুটপাট নয়, এক ধরনের প্রতারণা।”

অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিচালকরা সংগঠনের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ নাম ব্যবহার করছেন এবং মূল প্রতিষ্ঠাতার সুনামকে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

আজাদের পরিবার আরও জানায়, যারা সংগঠনের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের একে একে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে চুপ থাকেন, আবার অনেককে মাসোহারা ও উপহারের মাধ্যমে কিনে নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের পুরোনো সদস্যরা একে একে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু সংগঠনের আয় রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে মোবাইল অপারেটর, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব ও ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে – অভিযোগে বলা হয়, সেই অর্থ এখন ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে।

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কলরব’ শিল্পীগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামী সংগীত চর্চা। কিন্তু ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠাতা আইনুদ্দীন আল আজাদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর নেতৃত্ব চলে যায় বদরুজ্জামান ও রশিদ আহমদ ফেরদৌসের হাতে।

আজাদের পরিবার দাবি করেছে, সংগঠনের সম্পদ, আয় এবং মালিকানা কাগজপত্র কৌশলে বদলে ফেলা হয়েছে। তদন্ত হলে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তারা আশাবাদী।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। তারা সরকারের কাছে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

দোহারে সরকারি জায়গা দখলচেষ্টা: এনসিপি নেতার বাবাকে বাধা দিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

‘কলরব’ নিয়ে চরম বিতর্ক: শত কোটি টাকার দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠাতার পরিবারে মানবেতর জীবন

আপডেট সময় ০৮:২১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত সংগঠন ‘কলরব’-কে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন এক বিতর্কের ঝড়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ–এর পরিবার দাবি করেছে, কলরব এখন আর একটি শিল্পীগোষ্ঠী নয়, বরং এটি পরিণত হয়েছে শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্যে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন আজাদের বড় ভাই মো. শামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কলরব ছিল আমার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এটি এখন দুর্বৃত্তদের হাতে পড়ে সম্পূর্ণভাবে লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আজাদ মৃত্যুর আগে কলরবের যেসব গজল ও ইসলামিক সংগীত রেকর্ড করে গেছেন, সেগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানির কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব তৈরি করেছে। কিন্তু সেই আয়ের কোন অংশ আজাদের পরিবার পাননি।

বদরুজ্জামান নামের একজন সাবেক অফিস বয়, বর্তমানে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে সমস্ত আয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, সংগঠনের সকল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম – ইউটিউব, ফেসবুক পেজ, স্পন্সর এবং অনুদানের টাকা – সবই এখন জমা হয় তার মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, “আমার সন্তানরা আজ এতিম। অথচ যারা একসময় অফিস সহকারী ছিলেন, তারা আজ ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রোডাকশন হাউজ, এমনকি হেলিকপ্টারেরও মালিক। এটি শুধু লুটপাট নয়, এক ধরনের প্রতারণা।”

অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিচালকরা সংগঠনের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ নাম ব্যবহার করছেন এবং মূল প্রতিষ্ঠাতার সুনামকে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

আজাদের পরিবার আরও জানায়, যারা সংগঠনের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের একে একে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে চুপ থাকেন, আবার অনেককে মাসোহারা ও উপহারের মাধ্যমে কিনে নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের পুরোনো সদস্যরা একে একে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু সংগঠনের আয় রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে মোবাইল অপারেটর, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব ও ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে – অভিযোগে বলা হয়, সেই অর্থ এখন ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে।

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কলরব’ শিল্পীগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামী সংগীত চর্চা। কিন্তু ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠাতা আইনুদ্দীন আল আজাদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর নেতৃত্ব চলে যায় বদরুজ্জামান ও রশিদ আহমদ ফেরদৌসের হাতে।

আজাদের পরিবার দাবি করেছে, সংগঠনের সম্পদ, আয় এবং মালিকানা কাগজপত্র কৌশলে বদলে ফেলা হয়েছে। তদন্ত হলে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তারা আশাবাদী।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। তারা সরকারের কাছে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।