ঢাকা ০৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ প্রেমের ফাঁদে পড়ে হারালেন ১২ কোটির বেশি টাকা

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৮৯ বার পড়া হয়েছে

ভারতের মুম্বাইয়ে এক ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ ভয়াবহ সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ফেসবুকে এক নারীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতারণা দুই বছর ধরে চলেছে। ওই বৃদ্ধ অনলাইনে ৭৩৪টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ৮.৭ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন।

ফেসবুক থেকেই শুরু প্রেমের অভিনয়
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ওই ব্যক্তি ‘শর্ভি’ নামের এক নারীর কাছে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। প্রথমে সেটি প্রত্যাখ্যান হলেও কিছুদিন পর অন্য একটি অ্যাকাউন্ট থেকে শর্ভির নামেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান এবং তা গ্রহণ করেন। এরপর শুরু হয় চ্যাট, যা দ্রুতই ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তরিত হয়।

নারীটি নিজেকে স্বামীর থেকে আলাদা এবং সন্তানদের নিয়ে একা থাকা একজন নারী হিসেবে পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার কথা বলে টাকা চাইতে শুরু করেন। বৃদ্ধ বারবার তার আবেদনে সাড়া দিয়ে অর্থ পাঠাতে থাকেন।

একজন নয়, একাধিক নারীর ছদ্মবেশে প্রতারণা
শুধু শর্ভি নন, কিছুদিন পর ‘কবিতা’ নামে আরও এক নারী হোয়াটসঅ্যাপে বৃদ্ধের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি নিজেকে শর্ভির পরিচিত বান্ধবী পরিচয় দেন এবং অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে বৃদ্ধকে প্রলুব্ধ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় আরও বড় পরিমাণ অর্থ আদায়।

পরবর্তীতে ‘দিনাজ’ নামে তৃতীয় এক নারী যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, শর্ভি মারা গেছেন এবং হাসপাতালে বিল দেওয়ার জন্য টাকা দরকার। তিনি শর্ভি ও বৃদ্ধের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে আবেগের দোহাই দিয়ে টাকা নেন।

শেষে ‘জেসমিন’ নামে আরও এক নারী বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন, নিজেকে দিনাজের বন্ধু বলে পরিচয় দেন এবং আবারও অর্থ সাহায্য চান। এভাবে বারবার নারীর পরিচয়ে প্রতারকরা টাকা আদায় করতে থাকে।

সঞ্চয় শেষ, সন্দেহে জড়িয়ে ছেলে জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁস হয় ঘটনা
প্রতারণা এতটাই বেড়ে যায় যে বৃদ্ধ তার সব সঞ্চয় শেষ করে দেন। এরপর তিনি তার পুত্রবধূর কাছে আরও দুই লাখ টাকা ধার করেন। তাতেও শেষ না হলে ছেলের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা চাইলে ছেলের সন্দেহ হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের পর পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর বাবা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, সে জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন ছেলে। সেখানেই তার ডিমেনশিয়া ধরা পড়ে।

সাইবার অপরাধের মামলা, তদন্তে নেমেছে পুলিশ
২০২৫ সালের ২২ জুলাই বৃদ্ধের পরিবার সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে—শর্ভি, কবিতা, দিনাজ ও জেসমিন—চারটি পরিচয়ই সম্ভবত এক ব্যক্তির ছদ্মবেশ।

প্রতারক অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধের একাকিত্ব ও আবেগকে পুঁজি করে প্রেমের অভিনয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সতর্কবার্তা সমাজের জন্য
এই ঘটনার পর ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই ঘটনা একটি ক্লাসিক ‘রোমান্স স্ক্যাম’, যেখানে প্রতারক আবেগ ও সহানুভূতির ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানে ত্রাণ পৌঁছল গাজায়, মানবিক সংকট এখনও কমেনি

৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ প্রেমের ফাঁদে পড়ে হারালেন ১২ কোটির বেশি টাকা

আপডেট সময় ১০:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

ভারতের মুম্বাইয়ে এক ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ ভয়াবহ সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ফেসবুকে এক নারীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতারণা দুই বছর ধরে চলেছে। ওই বৃদ্ধ অনলাইনে ৭৩৪টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ৮.৭ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন।

ফেসবুক থেকেই শুরু প্রেমের অভিনয়
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ওই ব্যক্তি ‘শর্ভি’ নামের এক নারীর কাছে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। প্রথমে সেটি প্রত্যাখ্যান হলেও কিছুদিন পর অন্য একটি অ্যাকাউন্ট থেকে শর্ভির নামেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান এবং তা গ্রহণ করেন। এরপর শুরু হয় চ্যাট, যা দ্রুতই ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তরিত হয়।

নারীটি নিজেকে স্বামীর থেকে আলাদা এবং সন্তানদের নিয়ে একা থাকা একজন নারী হিসেবে পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার কথা বলে টাকা চাইতে শুরু করেন। বৃদ্ধ বারবার তার আবেদনে সাড়া দিয়ে অর্থ পাঠাতে থাকেন।

একজন নয়, একাধিক নারীর ছদ্মবেশে প্রতারণা
শুধু শর্ভি নন, কিছুদিন পর ‘কবিতা’ নামে আরও এক নারী হোয়াটসঅ্যাপে বৃদ্ধের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি নিজেকে শর্ভির পরিচিত বান্ধবী পরিচয় দেন এবং অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে বৃদ্ধকে প্রলুব্ধ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় আরও বড় পরিমাণ অর্থ আদায়।

পরবর্তীতে ‘দিনাজ’ নামে তৃতীয় এক নারী যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, শর্ভি মারা গেছেন এবং হাসপাতালে বিল দেওয়ার জন্য টাকা দরকার। তিনি শর্ভি ও বৃদ্ধের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে আবেগের দোহাই দিয়ে টাকা নেন।

শেষে ‘জেসমিন’ নামে আরও এক নারী বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন, নিজেকে দিনাজের বন্ধু বলে পরিচয় দেন এবং আবারও অর্থ সাহায্য চান। এভাবে বারবার নারীর পরিচয়ে প্রতারকরা টাকা আদায় করতে থাকে।

সঞ্চয় শেষ, সন্দেহে জড়িয়ে ছেলে জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁস হয় ঘটনা
প্রতারণা এতটাই বেড়ে যায় যে বৃদ্ধ তার সব সঞ্চয় শেষ করে দেন। এরপর তিনি তার পুত্রবধূর কাছে আরও দুই লাখ টাকা ধার করেন। তাতেও শেষ না হলে ছেলের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা চাইলে ছেলের সন্দেহ হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের পর পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর বাবা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, সে জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন ছেলে। সেখানেই তার ডিমেনশিয়া ধরা পড়ে।

সাইবার অপরাধের মামলা, তদন্তে নেমেছে পুলিশ
২০২৫ সালের ২২ জুলাই বৃদ্ধের পরিবার সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে—শর্ভি, কবিতা, দিনাজ ও জেসমিন—চারটি পরিচয়ই সম্ভবত এক ব্যক্তির ছদ্মবেশ।

প্রতারক অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধের একাকিত্ব ও আবেগকে পুঁজি করে প্রেমের অভিনয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সতর্কবার্তা সমাজের জন্য
এই ঘটনার পর ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই ঘটনা একটি ক্লাসিক ‘রোমান্স স্ক্যাম’, যেখানে প্রতারক আবেগ ও সহানুভূতির ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়।