ঢাকা ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাহমাতুল্লিল আলামিন: মানবতার জন্য মহানবী (সা.)-এর অনন্য দৃষ্টান্ত

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৬:৩৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৬০ বার পড়া হয়েছে

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠানো হয়েছে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত হিসেবে। তাই তিনি পরিচিত ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ নামে—যার অর্থ ‘সকল জগতের জন্য রহমত’।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আমি আপনাকে বিশ্বজাহানের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি” (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)। এ আয়াত স্পষ্ট করে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন দয়া, ক্ষমাশীলতা, সহানুভূতি ও ন্যায়পরায়ণতার অনন্য প্রতীক।

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, তায়েফের মানুষ নবীজিকে (সা.) পাথর মেরে রক্তাক্ত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা এসে শহর ধ্বংসের অনুমতি চাইলেন। কিন্তু নবীজি (সা.) বললেন, “আমি চাই না তাদের ওপর আজাব আসুক। বরং তারা যেন ভবিষ্যতে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে।” এটি তাঁর অসীম করুণা ও ক্ষমাশীলতার প্রমাণ।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি জগতসমূহের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি, শাস্তিদানকারী হিসেবে নয়।” (সহিহ মুসলিম)। আবার অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, “সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ দাও, বিমুখ করো না।” (বুখারি ও মুসলিম)। পশুপাখি পর্যন্ত তাঁর মমতা লাভ করেছে; তিনি বিড়াল পুষতেন এবং প্রাণিকুলের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করতেন।

বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) ঘোষণা করেন, আরব-অনআরব, সাদা-কালো বা জাতিগত কোনো বিভাজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সবাই আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। মানবতার এই চূড়ান্ত ঘোষণা সমতার বার্তা বহন করে।

হজরত আলী (রা.)-এর বর্ণনায় নবীজির চরিত্র ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনম্র, রূঢ়ভাষা ও অশ্লীলতা মুক্ত। তিনি কারও দোষ খুঁজতেন না, কৃপণ ছিলেন না এবং কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না।

সহিহ বুখারির হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি যতক্ষণ পর্যন্ত কারও কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্য মানুষদের তুলনায় অধিক প্রিয় না হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না।”

মানব জাতি, জিন জাতি ও সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন রহমতের প্রতীক। তাঁর প্রতিটি কাজ ও শিক্ষা রাহমাতুল্লিল আলামিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তাই তাঁর আদর্শ ও জীবনাচরণ সর্বকালের জন্য মানব জাতির শ্রেষ্ঠ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাহমাতুল্লিল আলামিন: মানবতার জন্য মহানবী (সা.)-এর অনন্য দৃষ্টান্ত

আপডেট সময় ০৬:৩৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠানো হয়েছে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত হিসেবে। তাই তিনি পরিচিত ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ নামে—যার অর্থ ‘সকল জগতের জন্য রহমত’।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আমি আপনাকে বিশ্বজাহানের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি” (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)। এ আয়াত স্পষ্ট করে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন দয়া, ক্ষমাশীলতা, সহানুভূতি ও ন্যায়পরায়ণতার অনন্য প্রতীক।

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, তায়েফের মানুষ নবীজিকে (সা.) পাথর মেরে রক্তাক্ত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা এসে শহর ধ্বংসের অনুমতি চাইলেন। কিন্তু নবীজি (সা.) বললেন, “আমি চাই না তাদের ওপর আজাব আসুক। বরং তারা যেন ভবিষ্যতে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে।” এটি তাঁর অসীম করুণা ও ক্ষমাশীলতার প্রমাণ।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি জগতসমূহের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি, শাস্তিদানকারী হিসেবে নয়।” (সহিহ মুসলিম)। আবার অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, “সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ দাও, বিমুখ করো না।” (বুখারি ও মুসলিম)। পশুপাখি পর্যন্ত তাঁর মমতা লাভ করেছে; তিনি বিড়াল পুষতেন এবং প্রাণিকুলের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করতেন।

বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) ঘোষণা করেন, আরব-অনআরব, সাদা-কালো বা জাতিগত কোনো বিভাজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সবাই আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। মানবতার এই চূড়ান্ত ঘোষণা সমতার বার্তা বহন করে।

হজরত আলী (রা.)-এর বর্ণনায় নবীজির চরিত্র ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনম্র, রূঢ়ভাষা ও অশ্লীলতা মুক্ত। তিনি কারও দোষ খুঁজতেন না, কৃপণ ছিলেন না এবং কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না।

সহিহ বুখারির হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি যতক্ষণ পর্যন্ত কারও কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্য মানুষদের তুলনায় অধিক প্রিয় না হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না।”

মানব জাতি, জিন জাতি ও সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন রহমতের প্রতীক। তাঁর প্রতিটি কাজ ও শিক্ষা রাহমাতুল্লিল আলামিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তাই তাঁর আদর্শ ও জীবনাচরণ সর্বকালের জন্য মানব জাতির শ্রেষ্ঠ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।