ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’-ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। ‘থাউজ্যান্ড ম্যাডলিনস’নামে অভিযানে অংশ নেওয়া ফ্লোটিলার সবকটি জাহাজই আটক করে ফেলেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। জাহাজে থাকা শতাধিক অধিকারকর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে, যাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
এই আটকের পর শহিদুল আলমের পরিবার, বন্ধু এবং বিশ্ববরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা অবিলম্বে ও নিঃশর্তে তাদের মুক্তি দাবি করেছেন। তারা ইসরায়েলের এই কাজকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় “অবৈধ অপহরণ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
নয়াদিল্লির লেখক অরুন্ধতী রায়, নিউইয়র্কভিত্তিক পণ্ডিত গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক-সহ অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘গণহত্যাকারী ও বর্ণবাদী রাষ্ট্র’হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত এই কর্মীদের মুক্তি এবং গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা শহিদুল আলমসহ ‘কনশানস’জাহাজে থাকা ৯৩ জন গণমাধ্যমকর্মী ও চিকিৎসা সহায়তাকারী এবং বিচার ছাড়াই ইসরায়েলি কারাগারে আটক হাজার হাজার ফিলিস্তিনির অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছেন।
কানাডিয়ান বোট টু গাজা ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডেভিড হিপ বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নেই এই জাহাজগুলোতে থাকা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীদের আটক করার। তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন যে এই আটক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বাধ্যতামূলক নির্দেশনাকে অমান্য করে, যা গাজায় মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর কথা বলে।
হিপ আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য অপরাধী হতে পারেন না এবং তাদের আটক করা অবৈধ, ইচ্ছাকৃত ও অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলি অবৈধ দখলদারিত্ব আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সংবাদ শূন্যতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধের কারণে তৈরি হওয়া ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রেস ব্ল্যাকআউট’-এর সময়কালে শত শত ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে, কারারুদ্ধ বা নীরব করে দেওয়া হয়েছে। ‘কনশানস’জাহাজের এই নৌযাত্রা ছিল মূলত সেই নিপীড়নমূলক নীরবতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই, যাতে বিশ্ব গাজার ভেতরের বাস্তবতা জানতে পারে।