ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নববধূ ধর্ষণের পর মোজাম্মেল বলেন— তুচ্ছ বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১২:৩৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৬৬ বার পড়া হয়েছে

 

নববধূ ধর্ষণের পর মোজাম্মেল বলেন— তুচ্ছ বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না

‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি, চেতনা জমা দেইনি।’ গত বছরের ১৮ জুলাই এক সমাবেশে এমন কথা বলেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

 

 

 

 

সোমবার (১৩ অক্টোবর) জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

 

জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোজাম্মেল হকের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। ঘটনাপ্রবাহ-৪ এ ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের বিবরণ দেন তিনি। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের ৪৮টি জেলায় ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালানো হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে ড্রোনে চিহ্নিত করে প্রাণঘাতি অস্ত্রে শতাধিক ছাত্রকে হত্যা করা হয়।

 

 

 

 

ওই দিনই আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন— ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি।’ এই সেই মোজাম্মেল, যিনি ১৯৭২ সালে নববধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রেপ্তার হন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

এ সময় হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা আমি গতকাল (রোববার) দাখিল করেছি। এটা আমি পড়ে দিচ্ছি, পৃষ্ঠা ৮৫। নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগার মোজাম্মেলের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন—

 

 

 

 

‘মোজাম্মেল ধরা পড়েছে মেজর নাসেরের হাতে। স্থান: টঙ্গী। বঙ্গবন্ধু ঘরে ঢোকামাত্র মোজাম্মেলের বাবা ও দুই ভাই কেঁদে বঙ্গবন্ধুর পায়ে পড়ল। টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতিও পায়ে ধরার চেষ্টা করলেন। পা খুঁজে পেলেন না। পা মোজাম্মেলের আত্মীয়স্বজনের দখলে।

 

বঙ্গবন্ধু বললেন, ঘটনা কী বলো?

 

জবাবে টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, আমাদের মোজাম্মেলকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। মেজর নাসের তাকে ধরেছে। নাসের বলেছে, তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে।

 

বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, মিথ্যা মামলাটা কী?

 

মোজাম্মেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, খুনের মামলা লাগায়ে দিয়েছে।

 

টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, এই মেজর আওয়ামী লীগ শুনলেই তারাবাতির মতো জ্বলে ওঠে। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে— টঙ্গীতে আমি কোনো আওয়ামী লীগের বদ রাখব না। বঙ্গবন্ধু! আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির। টঙ্গীতে থাকি না। ঢাকায় চলে এসেছি। (ক্রন্দন)

 

বঙ্গবন্ধু বললেন, কান্দিস না। কান্দার মতো কিছু ঘটে নাই। আমি এখনো বেঁচে আছি। মরে যাই নাই। ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 

তিনি মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন। মেজর নাসেরকে টঙ্গী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জরুরি নির্দেশ দেওয়া হলো।

 

মূল ঘটনা (সূত্র: Bangladesh Legacy of Blood; Anthony Mascarenhaas): এক নবদম্পতি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়ি আটক করে। গাড়ির ড্রাইভার ও নববিবাহিত তরুণীর স্বামীকে হত্যা করে। মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। মেয়েটির রক্তাক্ত ডেড বডি তিনদিন পর টঙ্গী ব্রিজের নিচে পাওয়া যায়।

 

মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ার পর মোজাম্মেল বলল, ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে তিন লাখ টাকা দেব। বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাব। আপনি পড়বেন বিপদে। আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না।

 

মেজর নাসের বললেন, এটা তুচ্ছ বিষয়?

 

মোজাম্মেল জবাব দিল না। উদাস চোখে তাকাল।

 

মেজর নাসের বললেন, আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করব। তোমার তিন লাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো।

 

মোজাম্মেল বলল, দেখা যাক।

 

মোজাম্মেল ছাড়া পেয়ে মেজর নাসেরকে তার বাসায় পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিল।’

 

হুমায়ূন আহমেদ নিজের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এসব কথা বলেছেন। পরে আরও তথ্যসূত্র দেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

জনপ্রিয় সংবাদ

নববধূ ধর্ষণের পর মোজাম্মেল বলেন— তুচ্ছ বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না

নববধূ ধর্ষণের পর মোজাম্মেল বলেন— তুচ্ছ বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না

আপডেট সময় ১২:৩৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

 

নববধূ ধর্ষণের পর মোজাম্মেল বলেন— তুচ্ছ বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না

‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি, চেতনা জমা দেইনি।’ গত বছরের ১৮ জুলাই এক সমাবেশে এমন কথা বলেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

 

 

 

 

সোমবার (১৩ অক্টোবর) জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

 

জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোজাম্মেল হকের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। ঘটনাপ্রবাহ-৪ এ ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের বিবরণ দেন তিনি। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের ৪৮টি জেলায় ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালানো হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে ড্রোনে চিহ্নিত করে প্রাণঘাতি অস্ত্রে শতাধিক ছাত্রকে হত্যা করা হয়।

 

 

 

 

ওই দিনই আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন— ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি।’ এই সেই মোজাম্মেল, যিনি ১৯৭২ সালে নববধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রেপ্তার হন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

এ সময় হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা আমি গতকাল (রোববার) দাখিল করেছি। এটা আমি পড়ে দিচ্ছি, পৃষ্ঠা ৮৫। নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগার মোজাম্মেলের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন—

 

 

 

 

‘মোজাম্মেল ধরা পড়েছে মেজর নাসেরের হাতে। স্থান: টঙ্গী। বঙ্গবন্ধু ঘরে ঢোকামাত্র মোজাম্মেলের বাবা ও দুই ভাই কেঁদে বঙ্গবন্ধুর পায়ে পড়ল। টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতিও পায়ে ধরার চেষ্টা করলেন। পা খুঁজে পেলেন না। পা মোজাম্মেলের আত্মীয়স্বজনের দখলে।

 

বঙ্গবন্ধু বললেন, ঘটনা কী বলো?

 

জবাবে টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, আমাদের মোজাম্মেলকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। মেজর নাসের তাকে ধরেছে। নাসের বলেছে, তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে।

 

বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, মিথ্যা মামলাটা কী?

 

মোজাম্মেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, খুনের মামলা লাগায়ে দিয়েছে।

 

টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, এই মেজর আওয়ামী লীগ শুনলেই তারাবাতির মতো জ্বলে ওঠে। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে— টঙ্গীতে আমি কোনো আওয়ামী লীগের বদ রাখব না। বঙ্গবন্ধু! আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির। টঙ্গীতে থাকি না। ঢাকায় চলে এসেছি। (ক্রন্দন)

 

বঙ্গবন্ধু বললেন, কান্দিস না। কান্দার মতো কিছু ঘটে নাই। আমি এখনো বেঁচে আছি। মরে যাই নাই। ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 

তিনি মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন। মেজর নাসেরকে টঙ্গী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জরুরি নির্দেশ দেওয়া হলো।

 

মূল ঘটনা (সূত্র: Bangladesh Legacy of Blood; Anthony Mascarenhaas): এক নবদম্পতি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়ি আটক করে। গাড়ির ড্রাইভার ও নববিবাহিত তরুণীর স্বামীকে হত্যা করে। মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। মেয়েটির রক্তাক্ত ডেড বডি তিনদিন পর টঙ্গী ব্রিজের নিচে পাওয়া যায়।

 

মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ার পর মোজাম্মেল বলল, ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে তিন লাখ টাকা দেব। বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাব। আপনি পড়বেন বিপদে। আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না।

 

মেজর নাসের বললেন, এটা তুচ্ছ বিষয়?

 

মোজাম্মেল জবাব দিল না। উদাস চোখে তাকাল।

 

মেজর নাসের বললেন, আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করব। তোমার তিন লাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো।

 

মোজাম্মেল বলল, দেখা যাক।

 

মোজাম্মেল ছাড়া পেয়ে মেজর নাসেরকে তার বাসায় পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিল।’

 

হুমায়ূন আহমেদ নিজের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এসব কথা বলেছেন। পরে আরও তথ্যসূত্র দেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।