চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) কার্যালয় ভাঙচুরের ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় নগরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন বিপ্লব উদ্যানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা।
এ সময় এনসিপির নেতারা বলেন, নগরীর নিউমার্কেটের দোস্ত বিল্ডিংয়ের কার্যালয় থেকে গোপন বৈঠক করে চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত যাতায়াত করতো। কার্যক্রমও চলতো তাদের। প্রশাসন এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়দের আহ্বানে ওই কার্যালয় দেখতে যান এনসিপির নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনসিপির চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিন ও মোহাম্মদ এরফানুল হক। এতে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. রাফসান জানি ও মো. জসিম উদ্দিন। এ ছাড়া কমিটির সদস্য, সংগঠক ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ এরফানুল হক বলেন, ‘দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা অবগত আছেন, ফ্যাসিবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেমে নেই। দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তাদের বেশ কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিদিনই বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। এসব কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে তারা চট্টগ্রামেও বিভিন্ন জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে যুক্ত। কালকে চট্টগ্রামের শান্তিকামী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের নীলনকশা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে একদল সন্ত্রাসী নগরের দোস্ত বিল্ডিংয়ে একত্রিত হয়ে বাকলিয়া এক্সেস রোডে কার্যক্রম সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হই। আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী দলের কার্যালয়গুলো ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানকারীরা বন্ধ করে দিলেও দোস্ত বিল্ডিংয়ে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছিল তারা। বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিল, গত ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে তারা বিনা ভাড়ায় দখল করে সেখানে অবস্থান করছে ও অপকর্ম চালাচ্ছে। দুই মাস ধরে খবর পাচ্ছিলাম কার্যক্রম চলছে। দরজা-জানালা লাগানো হচ্ছে, লোকজন আসা-যাওয়া করছে। সেখান থেকে চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কোনও সংগঠনের উত্থান ঘটতে দেবো না।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে নগরের নিউমার্কেটের দোস্ত বিল্ডিংয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল তরুণ। এতে নেতৃত্ব দেন এনসিপি নেতা আরিফ মঈনুদ্দিন। তার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও নেতাকর্মীরা ছিলেন।
কার্যালয় ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, একদল তরুণ কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করছেন। এতে আরিফ মঈনুদ্দিনসহ এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দেখা গেছে।
এ বিষয়ে যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ এরফানুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেমে নেই। পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করা হতো।’
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের অভিযোগ প্রশ্নে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অবশ্যই স্বাধীনতার একজন অন্যতম স্থপতি। কিন্তু গত ১৬ বছরে শেখ মুজিবকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে মানুষের ক্ষোভ আছে। সেখানে ছাত্র-জনতা ম্যুরাল ভাঙচুর করে। আমরা সেখানে শুধু সেটআপটা নষ্ট করে দিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবারের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছে তারা আসবে। আমরাও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। এনসিপির কোতোয়ালি শাখার লোকজন চেয়ার-টেবিল নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে। পাহাড়া দিচ্ছে। যাতে নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ আসলে প্রতিহত করা যায়।’