গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ডুমরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চলছে চরম অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা। নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলী আহমেদ শেখ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ৩ জুলাই থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের ছুটি নেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিজাম শেখকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়ে।
তিন মাসের এই সময়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ থেকে শুরু করে গ্রাম আদালত—প্রায় সব সেবাই স্থবির হয়ে যায়। সেবা নিতে আসা মানুষকে ভোগান্তির শেষ নেই, কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না এবং সচিবের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ।
এ অবস্থায় তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। সূত্র জানায়, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরিষদ বিভিন্ন উৎস থেকে আদায় করে সাড়ে ৮ লাখ টাকা—যার মধ্যে রয়েছে বকেয়া ট্যাক্স, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ফি। নিয়ম অনুযায়ী এই অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা জমা হয়নি। বরং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা পুরো অর্থ নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক ইউপি সদস্য স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ৩৬ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে; সব মিলিয়ে সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ টাকা বণ্টন হয় এবং বাকি অর্থ নেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এদিকে ছুটিতে থাকা চেয়ারম্যানের প্রায় ৫৮ হাজার টাকার বকেয়া বেতনও প্রদান করা হয়নি।
তিন মাসের ব্যাংক হিসাবেও মিলছে অসংগতি, যা বিষয়টিকে আরও সন্দেহজনক করে তুলেছে। অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম শেখের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে সেবা নিতে এসে নাগরিকরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। কেউ জন্মনিবন্ধন পাচ্ছেন না, কেউ জমি-সংক্রান্ত অভিযোগে বিচার চাইতে গিয়ে চেয়ারের অনুপস্থিতিতে ফেরত যাচ্ছেন, আবার কেউ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভাতা পেতে সচিবকে ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। হিসাব চাওয়ায় ইউপি সচিব বিশ্বাস মো. ফেরদাউস ইসলাম সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সেবা বঞ্চনার এই সমন্বিত চিত্রে ক্ষোভে ফুঁসছে ডুমরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।


























