ঢাকা ০৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি নেতার আড়ালে ভয়ঙ্কর প্রতারক নাজমুল

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • ৬১৬ বার পড়া হয়েছে

 

বিএনপি নেতা নাজমুল হাসান। নেত্রকোণা থেকে উঠে আসা এবং বিএনপির রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতারণার যে কয়জন চিহ্নিত হাইব্রিড নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কেবল রাজনৈতিক মহলেই নয়, তার প্রতারণার বীজ ছড়িয়ে আছে সামাজিক ব্যবসায়িক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোতেও।

 

নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সমূহকে গভীর অনুসন্ধান এবং তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে পর্যালচনা করে দেখা গিয়েছে, তিনি মুলত ম্যাগনেটিক কয়েন প্রতারণা সিন্ডিকেটের একজন বড়সড় হোতা। এছাড়াও ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার, মহামূল্যবান ধাতব ইউরিনিয়াম জালিয়াতি এবং ভূয়া ডায়মন্ড চক্রের সঙ্গেও তার যোগসাজোসের যথাযথ প্রমাণ পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র।

 

 

তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে, নানাবিধ প্রতারণার জন্য তিনি বেছে নেন এক একটি স্বতন্ত্র নাম ও ভূয়া পরিচয়। কখনো ডা. কামাল চৌধুরী, কখনো ডা. সালেহীন আবার কখনো তিনি বনে যান ডা. আদনান সালেহীন। ভিন্ন ভিন্ন নাম, পরিচয়, সামাজিক অবস্থা এবং দৃশ্যমান বিত্ত বৈভবের ফাঁদ পেতে তিনি বিছিয়ে দেন প্রতারণার জাল। যে জালে খুব সহজেই অধিক মুনাফার লোভে আঁটকে যায় ব্যবসায়ী, ব্যাংকার সহ নানা পেশার মানুষজন।

 

প্রথমে সুকৌশলে ম্যাগনেটিক কয়েন ক্রয় বিক্রয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমেই শুরু হয় প্রতারণার প্রথমিক পর্ব। অতঃপর দ্বিতীয় পর্বে এই কয়েনটি দেখানো এবং বিশ্বাস অর্জনের জন্য ফাঁদা হয় আরো গভীর নাটক। কখনো দেশের অত্যান্ত স্পর্শকাতর কোন স্থানে অথবা দেশের বাহিরে দামী পাঁচতারকা হোটেলের ভিআইপি কক্ষ ভাড়া করে চালানো হয় গোপন প্রদর্শনী। ফলে খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে তার প্রতারণা। আর এভাবেই তার প্রতারণা ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়ে চুপচাপ মুখ বন্ধ করে ফেলে অনেকেই। তবে মুখ বন্ধ করার জন্য থাকে আলাদা নাটক। কখনো প্রশাসনকে করা, কখনো বা স্থানীয় সন্ত্রাসী তথা রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহার করেন তিনি।

 

তার এই প্রতারণা চক্রে জড়িয়ে আছে অপর এক প্রভাবশালী আওয়ামী নেতা মাজহারুল ইসলাম সোহেলের নাম। যিনি আওয়ামী ঘনিষ্ট এবং আওয়ামীলীগের বেশকয়েকজন প্রভাবশালী এমপি তথা নেত্রকোনার এমপি অসীম কুমার উকিল এবং ইফতেকার তালুকাদার পিন্টুর ছত্রছায়ায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন নাজমুল হাসানের পক্ষে এমনটাই অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর।

 

 

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ভয়াবহ এই ম্যাগনেটিক কয়েন প্রতারণার মাধ্যমে গড়া বিপুল পরিমান অর্থে নাজমুল হাসান নিজ নামে খুলেছেন ডায়নামিক কনজুমার লিঃ সহ একাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত ও অবৈধ আয়কৃত অর্থে তিনি নিয়েছেন রোটারী ক্লাব, বিএনপির অঙ্গসংগঠন দাবীকরা জিয়া মঞ্চ, জিয়া পরিষদ সহ সামাজিক ও রাজনৈতিক বেশ কিছু পদবী। যা তার প্রতারণা আড়ালের ঢাল হিসেবে কাজ করে।

 

বিএনপির নাম ভাঙ্গানো প্রতারক ও হাইব্রিড এই নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোঃ লোকমান হোসেন, চট্টগ্রাম খুলসীর ব্যবসায়ী কবির হোসেন, পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী মোঃ রফিক, কুমিল্লার ব্যবসায়ী মোঃ হারূন উর রশিদ, নরসিংদীর কাপড় ব্যবসায়ী হাজী মোঃ শহিদুল্লাহ সহ দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান মাস্ক গ্রুপের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান ও সিবিএম গ্রুপের মোঃ জয়নাল ও প্রায় অর্ধশতাধিক ভূক্তভোগী। প্রত্যেকের অভিযোগ, সুকৌশলে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর, কেউ টাকা ফেরত চাইলে তাকে আইনী হয়রানীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্যাতনও করে থাকেন তিনি।

 

এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা ডি.এম.পি’র ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে তার ব্যবহৃত ছদ্মনাম ডা. কামাল চৌধুরী সহ কয়েকটি ছদ্ম পরিচয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রযুক্তির সহায়তায় তার প্রতারণার পরিচয় ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরো বিশদ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে তারা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণেও প্রস্তুত বলে জানা গিয়েছে গোয়েন্দাসূত্র থেকে।

 

 

এদিকে তার বিরুদ্ধে আণীত সকল অভিযোগ এবং প্রতারণার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দ্যেশে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বাংলালিংক নম্বরে যোগযোগ করলে তিনি সপ্রণদিত ভাবে যোগাযোগ এড়িয়ে যান এবং মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 

এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক ও একাধিক জেষ্ঠ্য বিএনপি নেতাকর্মীর নিকট এম নাজমুল হাসানের ব্যাপারে জানতে চাইলে, তারা উল্ল্যেখ করেন নাজমুল হাসান তেমন একটা প্রচলিত মুখ নন। তবে পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি বিএনপির মনোনয়ন পেতে নেত্রকোণায় তিনি বেশ প্রচারণা চালিয়েছেন। যদিও দলীয় মনোনয়ন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ড অত্যান্ত স্বচ্ছ। যথাযথ অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার ব্যাপারে সাংগঠনিক শাস্তিমুলক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

 

এদিকে অভিযুক্ত প্রতারক ও বিএনপি নেতা এম নাজমুল হাসানের প্রতারণায় নিঃস্ব একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্য অতিশীঘ্রই বিষয়টির আইনি সমাধান চান তারা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা এবং তার বিরুদ্ধে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী করেন তারা।

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

রাস্তায় না, নারী সঙ্গীর বাসায় গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা; চাঞ্চল্যকর তথ্য

বিএনপি নেতার আড়ালে ভয়ঙ্কর প্রতারক নাজমুল

আপডেট সময় ১০:৩২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

 

বিএনপি নেতা নাজমুল হাসান। নেত্রকোণা থেকে উঠে আসা এবং বিএনপির রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতারণার যে কয়জন চিহ্নিত হাইব্রিড নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কেবল রাজনৈতিক মহলেই নয়, তার প্রতারণার বীজ ছড়িয়ে আছে সামাজিক ব্যবসায়িক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোতেও।

 

নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সমূহকে গভীর অনুসন্ধান এবং তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে পর্যালচনা করে দেখা গিয়েছে, তিনি মুলত ম্যাগনেটিক কয়েন প্রতারণা সিন্ডিকেটের একজন বড়সড় হোতা। এছাড়াও ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার, মহামূল্যবান ধাতব ইউরিনিয়াম জালিয়াতি এবং ভূয়া ডায়মন্ড চক্রের সঙ্গেও তার যোগসাজোসের যথাযথ প্রমাণ পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র।

 

 

তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে, নানাবিধ প্রতারণার জন্য তিনি বেছে নেন এক একটি স্বতন্ত্র নাম ও ভূয়া পরিচয়। কখনো ডা. কামাল চৌধুরী, কখনো ডা. সালেহীন আবার কখনো তিনি বনে যান ডা. আদনান সালেহীন। ভিন্ন ভিন্ন নাম, পরিচয়, সামাজিক অবস্থা এবং দৃশ্যমান বিত্ত বৈভবের ফাঁদ পেতে তিনি বিছিয়ে দেন প্রতারণার জাল। যে জালে খুব সহজেই অধিক মুনাফার লোভে আঁটকে যায় ব্যবসায়ী, ব্যাংকার সহ নানা পেশার মানুষজন।

 

প্রথমে সুকৌশলে ম্যাগনেটিক কয়েন ক্রয় বিক্রয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমেই শুরু হয় প্রতারণার প্রথমিক পর্ব। অতঃপর দ্বিতীয় পর্বে এই কয়েনটি দেখানো এবং বিশ্বাস অর্জনের জন্য ফাঁদা হয় আরো গভীর নাটক। কখনো দেশের অত্যান্ত স্পর্শকাতর কোন স্থানে অথবা দেশের বাহিরে দামী পাঁচতারকা হোটেলের ভিআইপি কক্ষ ভাড়া করে চালানো হয় গোপন প্রদর্শনী। ফলে খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে তার প্রতারণা। আর এভাবেই তার প্রতারণা ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়ে চুপচাপ মুখ বন্ধ করে ফেলে অনেকেই। তবে মুখ বন্ধ করার জন্য থাকে আলাদা নাটক। কখনো প্রশাসনকে করা, কখনো বা স্থানীয় সন্ত্রাসী তথা রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহার করেন তিনি।

 

তার এই প্রতারণা চক্রে জড়িয়ে আছে অপর এক প্রভাবশালী আওয়ামী নেতা মাজহারুল ইসলাম সোহেলের নাম। যিনি আওয়ামী ঘনিষ্ট এবং আওয়ামীলীগের বেশকয়েকজন প্রভাবশালী এমপি তথা নেত্রকোনার এমপি অসীম কুমার উকিল এবং ইফতেকার তালুকাদার পিন্টুর ছত্রছায়ায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন নাজমুল হাসানের পক্ষে এমনটাই অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর।

 

 

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ভয়াবহ এই ম্যাগনেটিক কয়েন প্রতারণার মাধ্যমে গড়া বিপুল পরিমান অর্থে নাজমুল হাসান নিজ নামে খুলেছেন ডায়নামিক কনজুমার লিঃ সহ একাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত ও অবৈধ আয়কৃত অর্থে তিনি নিয়েছেন রোটারী ক্লাব, বিএনপির অঙ্গসংগঠন দাবীকরা জিয়া মঞ্চ, জিয়া পরিষদ সহ সামাজিক ও রাজনৈতিক বেশ কিছু পদবী। যা তার প্রতারণা আড়ালের ঢাল হিসেবে কাজ করে।

 

বিএনপির নাম ভাঙ্গানো প্রতারক ও হাইব্রিড এই নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোঃ লোকমান হোসেন, চট্টগ্রাম খুলসীর ব্যবসায়ী কবির হোসেন, পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী মোঃ রফিক, কুমিল্লার ব্যবসায়ী মোঃ হারূন উর রশিদ, নরসিংদীর কাপড় ব্যবসায়ী হাজী মোঃ শহিদুল্লাহ সহ দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান মাস্ক গ্রুপের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান ও সিবিএম গ্রুপের মোঃ জয়নাল ও প্রায় অর্ধশতাধিক ভূক্তভোগী। প্রত্যেকের অভিযোগ, সুকৌশলে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর, কেউ টাকা ফেরত চাইলে তাকে আইনী হয়রানীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্যাতনও করে থাকেন তিনি।

 

এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা ডি.এম.পি’র ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে তার ব্যবহৃত ছদ্মনাম ডা. কামাল চৌধুরী সহ কয়েকটি ছদ্ম পরিচয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রযুক্তির সহায়তায় তার প্রতারণার পরিচয় ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরো বিশদ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে তারা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণেও প্রস্তুত বলে জানা গিয়েছে গোয়েন্দাসূত্র থেকে।

 

 

এদিকে তার বিরুদ্ধে আণীত সকল অভিযোগ এবং প্রতারণার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দ্যেশে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বাংলালিংক নম্বরে যোগযোগ করলে তিনি সপ্রণদিত ভাবে যোগাযোগ এড়িয়ে যান এবং মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 

এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক ও একাধিক জেষ্ঠ্য বিএনপি নেতাকর্মীর নিকট এম নাজমুল হাসানের ব্যাপারে জানতে চাইলে, তারা উল্ল্যেখ করেন নাজমুল হাসান তেমন একটা প্রচলিত মুখ নন। তবে পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি বিএনপির মনোনয়ন পেতে নেত্রকোণায় তিনি বেশ প্রচারণা চালিয়েছেন। যদিও দলীয় মনোনয়ন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ড অত্যান্ত স্বচ্ছ। যথাযথ অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার ব্যাপারে সাংগঠনিক শাস্তিমুলক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

 

এদিকে অভিযুক্ত প্রতারক ও বিএনপি নেতা এম নাজমুল হাসানের প্রতারণায় নিঃস্ব একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্য অতিশীঘ্রই বিষয়টির আইনি সমাধান চান তারা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা এবং তার বিরুদ্ধে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী করেন তারা।