৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অটল দাঁড়িয়ে আছে কুতুব মিনার। ১১৯১ সালে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে ঘুরি বংশের সুলতান মুহাম্মদ ঘুরি রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের কাছে পরাজিত হলেও পরের বছর প্রায় এক লাখ বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে ফিরে এসে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করেন। এরপর দিল্লি দখল ও হিন্দুস্তানের নবদখলকৃত ভূখণ্ডের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি অর্পণ করেন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেকের হাতে।
এই ঐতিহাসিক বিজয়ের স্মারক হিসেবে ১১৯৩ সালে আইবেকের আদেশে দিল্লিতে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ ও তার পাশে কুতুব মিনারের নির্মাণ শুরু হয়। তাঁর তত্ত্বাবধানে মিনারের প্রথম দুই তলার কাজ শেষ হয়। পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরি সুলতান ইলতুৎমিশ তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজ সম্পন্ন করেন। সর্বশেষ পঞ্চম তলার নির্মাণ ১৩৮৬ সালে সমাপ্ত করেন তুঘলক বংশের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক।
ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে মাহরৌলিতে অবস্থিত কুতুব কমপ্লেক্স বর্তমানে এক মনোমুগ্ধকর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ৭২.৫ মিটার উচ্চতার এই পাঁচ তলা মিনারের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে একটি করে ঝুলবারান্দা। নিচের অংশে ব্যাস ১৪.৩ মিটার হলেও উপরের দিকে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে তা মাত্র ২.৭ মিটারে নেমে এসেছে। মিনারের ভেতরে চূড়ায় পৌঁছাতে রয়েছে ৩৭৯ ধাপের সর্পিল সিঁড়ি। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার হিসেবে পরিচিত।
১০০ একরজুড়ে বিস্তৃত পুরো কুতুব কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, গিয়াস উদ্দীন বলবন, আলাউদ্দিন খিলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি এবং বিখ্যাত লৌহ স্তম্ভ। লাল বেলেপাথরে নির্মিত কুতুব মিনারের শরীরে শৈল্পিক ক্যালিগ্রাফিতে খোদাই করা রয়েছে পবিত্র কোরআনের আয়াত, যা সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদের মোহাবিষ্ট করে তোলে।
























