এবার প্রাইভেটকারের ভেতরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন একই পরিবারের ৭ সদস্য। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে। পরিচয় পাওয়া গেছে মৃত ব্যক্তিদের। তারা হলেন- প্রবীণ মিত্তল (৪২), তার বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং তিন ছোট সন্তান (দুই মেয়ে এবং এক ছেলে)।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে রাজ্যটির পঞ্চকুলায় একটি পার্ক করা গাড়িতে তিন শিশুসহ একটি পরিবারের ছয় সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায়। সপ্তম সদস্য প্রবীণ মিত্তল গাড়ির বাইরে বসে ছিলেন এবং বেঁচে ছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পরিবারটি ভারী ঋণের বোঝায় ডুবে ছিল। আর এ কারণেই একসাথে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন তারা। একটি বাড়ির বাইরে পার্ক করা গাড়িটি স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের জন্ম দেয়। ভিতরে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সোমবার রাতে, প্রবীণ মিত্তল এবং তার পরিবার পঞ্চকুলায় একটি অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। গভীর রাতে তারা তাদের বাড়ি দেরাদুনে ফিরে আসার পথে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে বলে ধারণা পুলিশের। এক লোক গাড়িটি থামতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার ভাই লোকটির কাছে গিয়ে তার অবস্থান জানতে চাইলাম। সে বলল, পরিবারটি বাগেশ্বর ধাম থেকে ফিরছিল। যেহেতু তারা কোনো হোটেল খুঁজে পায়নি, তাই তারা গাড়িতেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাকে গাড়িটি বাজার এলাকায় সরিয়ে নিতে বলেছিলাম।’
লোকটি গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো কিন্তু স্থানীয়রা তাতে রাজি হয়নি। সে গাড়িতে ফিরে এসে ভেতরে উঁকি মারল এবং যা দেখে তা ভয়াবহ ছিল। ছয়টি মৃতদেহ এবং একটি দুর্গন্ধযুক্ত গাড়ি।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন জানায়, ‘আমি ছয়জনকে শুয়ে থাকতে দেখেছি। তারা একে অপরের ওপর বমি করছিল। গাড়ি থেকে বের হচ্ছিল দুর্গন্ধ। আমি লোকটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাপার কী? সে তখন জানালো যে পরিবারটি আত্মহত্যা করেছে। সেও আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা যাবে। লোকটি দাবি করেছে যে সে বিশাল ঋণের বোঝায় ডুবে আছে।’
পঞ্চকুলা পলিশের ডেপুটি কমিশনার হিমাদ্রি কৌশিক এবং ডেপুটি কমিশনার আইন ও শৃঙ্খলা অমিত দাহিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা হিমাদ্রি কৌশিক বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি যে ছয়জনকে ওজস হাসপাতালে আনা হয়েছে। আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই, তখন জানতে পারি যে তারা মারা গেছেন। আরেকজনকে সেক্টর ৬-এর সিভিল হাসপাতালে আনা হয়। তাকেও মৃত ঘোষণা করা হয়।’
পুলিশ দুই পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে ঘটনাস্থল থেকে। পরিবারের এই কঠোর পদক্ষেপের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে নোটে। এতে লেখা হয়েছে ঋণের কারণে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে এই চরম পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা। যা ঘটেছে তার সবকিছুই তার দোষ এবং তার শ্বশুরকে ঝামেলা না করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেছেন প্রবীণ মিত্তল। মৃতদেহগুলো একটি বেসরকারি হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস ও এনডিটিভি