সংস্কার ও গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পূর্ণ না করে নির্বাচন আয়োজন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এই কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, “ভোট চাওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে, শহীদ পরিবারগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। তখনই প্রশ্ন উঠবে—সংস্কার কতটা হয়েছে, বিচার কতটা সম্পন্ন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তাদের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতেই হবে। সেটি হচ্ছে—বিচার, প্রশাসনিক সংস্কার এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা।”
শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নাহিদ ইসলাম মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পথসভা করেন। সেখানে বিহারি জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “ধর্ম, জাতি, ভাষা ভিন্ন হলেও আমরা সবাই এই রাষ্ট্রের নাগরিক। এই রাষ্ট্রের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও রাজনৈতিক অধিকার সবার প্রাপ্য। তাই আমরা এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে। সেই স্বপ্ন থেকেই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল।”
এরপর মোহাম্মদপুর টাউনহলে আরেকটি পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো দলের প্রচারে আসিনি। এসেছি আমাদের প্রজন্মের নির্যাতনের কথা বলতে। বিগত দেড় দশকে আমরা একটি শাসনব্যবস্থার শিকার ছিলাম যেখানে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সেই অসন্তোষ থেকেই এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই না, বারবার আমাদের রাজপথে নামতে হোক, জীবন দিতে হোক। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে, ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমাদের বারবার রাজপথে নামতে হয়েছে। এবার আমরা চাই, গণ-অভ্যুত্থান সফল হোক। আমরা সবাই মিলে সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবো।”
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, “আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না, যেখানে কেউ রাস্তায় নামলে গুম বা খুন হবে। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই না, যেটা দলীয় স্বার্থে কাজ করে। রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য—এই ন্যায্য চিন্তাধারার ভিত্তিতেই এনসিপি কাজ করছে।”
পথসভা শেষে নাহিদ ইসলাম মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তা মোড় এবং ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আরো দুটি পথসভায় অংশ নেন। এসব কর্মসূচিতে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।