জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি উভয় দলের প্রার্থীরা লাঙল প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল হিসেবে জি এম কাদেরের জাপার প্রার্থীরা লাঙল প্রতীক চেয়েছেন। হাইকোর্টে চলমান মামলার নথি দিয়ে লাঙল চেয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসের জাপার প্রার্থীরা।
জি এম কাদেরের জাপা প্রার্থীরা ২৫১ আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তা আজ সোমবার রাতে জানাতে পারেনি দলটি। একই অবস্থা ব্যারিস্টার আনিসের জাপারও। দলটি ৮১ আসনে মনোনয়ন ফরম নেওয়ার দাবি করেছিল।
জি এম কাদের ও তাদের দলের নেতৃত্বাধীন দলের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ব্যারিস্টার আনিস মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তাঁর দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। মনোনয়নপত্র কিনলেও, জমা দেননি। হাওলাদার বলেছেন, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে নিবন্ধিত দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যায়নপত্র জমা দিতে হয়। এর ভিত্তিতেই প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। দলটি কয়েকবার ভাঙলে, প্রতীক হাতছাড়া হয়নি। জাতীয় পার্টি- জেপি বাইসাইকেল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি গরুর গাড়ি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) প্রার্থীরা কাঁঠাল প্রতীকে নির্বাচন করেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত চার নির্বাচনে সমঝোতা করে অংশ নেওয়া জাপা স্বৈরাচারের দোসর তকমা পেয়েছেন। গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দলটি প্রধান বিরোধী দল ছিল। যদিও তাদের পরিচিতি ছিল গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে।
অতীতের ভূমিকার কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে চাপে রয়েছে জি এম কাদেরের জাপা। দলটির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের আপত্তিতে জাপাকে কোথায় ডাকেনি সরকার। তবে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে গত আগস্টে জাপা ষষ্ঠবারের মত ভাঙে। আওয়ামী লীগ আমলের মন্ত্রী এবং সর্বশেষ সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসের নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল গঠিত হয়। উভয় অংশ নিজেদের মূলধারা দাবি করছে।
আনিসুল ইসলাম বলেছেন, ‘গত মে মাসে দলের প্রেসিডিয়ামের সভার সিদ্ধান্তে কাউন্সিলর আহ্বান করা হয়। সেই কাউন্সিলে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের জাতীয় পার্টিই লাঙলের মালিক।’
জি এম কাদের অংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, কাউন্সিল আহ্বান করা হলেও, তা পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়। ফলে যে কাউন্সিলের কথা বলে লাঙল দাবি করা হচ্ছে, তা অবৈধ। জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টিই বৈধ এবং লাঙলের মালিক। দলের প্রার্থীরা লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
লাঙলের মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ব্যারিস্টার আনিসের জাপার নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘কাউন্সিলর স্থগিত করার এখতিয়ার কারো নেই। তাই হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। আদালত রুল জারি করেছেন। এ নথিসহ লাঙল প্রতীক চেয়ে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।’
৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। লাঙল প্রতীক নিয়ে মামলার শুনানি হতে পারে আগামী ৮ জানুয়ারি। মুজিবুল হক বলেছেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তারা যদি বাছাইয়ে আমাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনে যাব। সেখানে সুরাহা না পেলে উচ্চ আদালতে যাব। আদালতই ঠিক করবেন, লাঙল কার।’



















