দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে নিতান্ত এক সাধারণ গৃহবধূ থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। তার মৃত্যুতে সারাদেশে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিজীবনের এক আবেগঘন অধ্যায় ছিল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে ও সংসার। অল্প বয়সেই স্বামীকে হারালেও, তাদের পরিচয়, প্রেম ও দাম্পত্যের শুরুটা ছিল যেন এক রূপকথার গল্প।
পরিবারের স্মৃতিচারণায় জানা যায়, কলেজজীবনেই জিয়াউর রহমান নানার মুখে শুনেছিলেন ‘পুতুল’ নামে পরিচিত খালেদার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা। সুযোগ পেয়ে তাকে দেখেই মুগ্ধ হন জিয়া। সেই মুগ্ধতাই একসময় রূপ নেয় গভীর ভালোবাসায়।
জিয়ার প্রস্তাব প্রথমে পরিবারে দ্বিধা তৈরি করলেও তার ব্যক্তিত্ব ও আন্তরিকতায় ধীরে ধীরে সবাই সম্মত হন। ১৯৬০ সালের আগস্টে ঢাকার মুদিপাড়ার বাসায় তাড়াহুড়ো করে আকদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাদের বিয়ে। এক বছর পর শাহবাগ হোটেলে (বর্তমান পিজি হাসপাতাল) হয় বিবাহোত্তর সংবর্ধনা।
খালেদা জিয়ার ভাই-বোনদের স্মৃতিতে সেই বিয়ে ছিল সাদামাটা, কিন্তু ভালোবাসায় ভরপুর। গায়ে হলুদ, মেহেদি আর অল্প কয়েকজন আত্মীয়ের উপস্থিতিতেই শেষ হয় আয়োজন। নতুন দম্পতি হিসেবে জিয়া ও খালেদার মধ্যে ছিল গভীর বোঝাপড়া ও আন্তরিকতা—যা পরিবার-পরিজনের চোখে তাদের করে তুলেছিল এক আদর্শ জুটি।
বিয়ের পর অবসর পেলেই জিয়া স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যেতেন আত্মীয়দের বাড়িতে। বড় বোনের রান্নাঘরে বসে খুনসুটি, নতুন জামাইয়ের সহজ ব্যবহার—সব মিলিয়ে সংসারজীবনের শুরুটাই ছিল আনন্দময়।
১৯৬৫ সালে চাকরির সুবাদে জিয়া খালেদাকে নিয়ে পাকিস্তানে যান। পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ও খালেদা ছিলেন দৃঢ়চিত্ত, স্বামীর সাহস ও কর্তব্যবোধে আস্থা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। পরিবার জানায়, শ্বশুর-শাশুড়ির স্নেহ আর স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধায় তাদের সংসার ছিল অভিযোগহীন ও শান্ত।
মা বেগম তৈয়বা মজুমদারের ভাষায়, “জিয়া ও পুতুল ছিল সত্যিকারের মধুর দম্পতি।”
এই ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও ত্যাগের সংসারই পরবর্তীতে খালেদা জিয়াকে শক্ত ভিত দেয় দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে এগিয়ে যাওয়ার।
রাজনীতির উত্তাল সময় পেরিয়ে আজ তিনি নেই, কিন্তু জিয়াউর রহমানের সঙ্গে গড়া সেই রূপকথার সংসারের স্মৃতি রয়ে গেল ইতিহাসের পাতায়—ভালোবাসা ও দৃঢ়তার এক অনন্য দলিল হয়ে।




















