ঢাকা ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০২৭ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা, ব্যস্ত হয়ে উঠেছে শীর্ষ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ৫২৬ বার পড়া হয়েছে

এবার বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির পরিকল্পনায় ব্যস্ত। গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরামর্শক সংস্থা সিবিলাইনের প্রধান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প জানান, একাধিক বিশালাকার ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরাও তার ক্লায়েন্টদের তালিকায় রয়েছেন।

ক্রাম্প বলেন, ‘২০২৭ সালকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ঝুঁকির বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। চীন-তাইওয়ান সংকট, রাশিয়ার আগ্রাসন, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং মার্কিন রাজনীতির অনিশ্চয়তা – সবকিছু একযোগে বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে।’ ব্রিটিশ সেনা ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো সেই বছর বড় সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করছে, এবং মার্কিন বাহিনী আলাদাভাবেও ২০২৭ সালের প্রস্তুতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এ অবস্থায় বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সরবরাহ চেইনের বিকল্প খোঁজা। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে চলছে মূল্যায়ন। কোম্পানিগুলো যাচাই করছে—যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বেশ কিছু পণ্য বা যন্ত্রাংশের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এ অবস্থায় চীন ও রুশ পণ্য ও কাঁচামালের বিকল্প উৎস খোঁজার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বৃটিশ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সাইবার হামলা মোকাবিলায় শঙ্কিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাইবার হামলার আশঙ্কা বেশি, বিশেষ করে রাশিয়া বা চীনের পক্ষ থেকে। কোম্পানিগুলো এখন তাদের আইটি অবকাঠামো ও ডিজিটাল সিস্টেম আরও সুরক্ষিত করার কাজ করছে। এতে তারা ব্যবহার করছে পস সিস্টেম (পয়েন্ট অব সেলস), স্টক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইত্যাদি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ রিজার্ভ সেনা ও ভেটেরানরা ডাকা হতে পারে, যারা অনেকেই এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

এদিকে কোম্পানিগুলো এখন থেকেই হিসাব রাখছে, কোন কোন কর্মী রিজার্ভ বা ভেটেরান হিসেবে যুদ্ধে ডাক পেতে পারেন। যুদ্ধে রিজার্ভ সেনা ও সাবেক সৈনিকদের ডেকে পাঠানো হলে বিভিন্ন খাতে কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সম্ভাব্য জনবলের ঘাটতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।

সেই বছর খাদ্য সরবরাহের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কোভিড-১৯ কালীন সময়ের মতো পণ্য ঘাটতি ও সীমিত বিক্রির ঘটনা যুদ্ধের সময় ফের তীব্রতর হয়ে দেখা দিতে পারে। সরকার যেমন সাধারণ মানুষকে তিন দিনের খাবার, পানি, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, রেডিও ইত্যাদি রাখার পরামর্শ দিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বড় কোম্পানিগুলোও স্টাফদের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিট বা সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি রাখছে।

টেকনোলজির ওপর নির্ভরতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যেমন স্পেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে টমেটোভর্তি ট্রাক ব্রিটেনে এসেও খোলা যায়নি—কারণ ট্রাকগুলো রিমোট নিয়ন্ত্রিতভাবে লক করা ছিল এবং তা খুলতে স্পেনের সার্ভার সচল লাগত। অত্যাধুনিক ট্রাকের দরজা খুলতে না পারার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাগুলো কীভাবে যুদ্ধকালীন সময়ে ভেঙে পড়তে পারে।

এদিকে ক্রাম্প সতর্ক করেন যে, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোনো নিয়মে না ভেবে এখন থেকেই ‘চিন্তার বাইরে’ এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ শান্তির দীর্ঘ সময়ের অভ্যস্ততা থেকে বের হয়ে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারছে, যে কোনো মুহূর্তে সবকিছু বদলে যেতে পারে। যুদ্ধ এখন আর কেবল সেনাবাহিনীর বিষয় নয় – এটি খাদ্য, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রস্তুতি এখন অত্যাবশ্যক।

জনপ্রিয় সংবাদ

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাসের পর রাজনীতিতে সক্রিয়, নায়েবে আমির হওয়ার গুঞ্জন

২০২৭ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা, ব্যস্ত হয়ে উঠেছে শীর্ষ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও

আপডেট সময় ১০:০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

এবার বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির পরিকল্পনায় ব্যস্ত। গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরামর্শক সংস্থা সিবিলাইনের প্রধান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প জানান, একাধিক বিশালাকার ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরাও তার ক্লায়েন্টদের তালিকায় রয়েছেন।

ক্রাম্প বলেন, ‘২০২৭ সালকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ঝুঁকির বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। চীন-তাইওয়ান সংকট, রাশিয়ার আগ্রাসন, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং মার্কিন রাজনীতির অনিশ্চয়তা – সবকিছু একযোগে বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে।’ ব্রিটিশ সেনা ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো সেই বছর বড় সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করছে, এবং মার্কিন বাহিনী আলাদাভাবেও ২০২৭ সালের প্রস্তুতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এ অবস্থায় বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সরবরাহ চেইনের বিকল্প খোঁজা। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে চলছে মূল্যায়ন। কোম্পানিগুলো যাচাই করছে—যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বেশ কিছু পণ্য বা যন্ত্রাংশের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এ অবস্থায় চীন ও রুশ পণ্য ও কাঁচামালের বিকল্প উৎস খোঁজার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বৃটিশ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সাইবার হামলা মোকাবিলায় শঙ্কিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাইবার হামলার আশঙ্কা বেশি, বিশেষ করে রাশিয়া বা চীনের পক্ষ থেকে। কোম্পানিগুলো এখন তাদের আইটি অবকাঠামো ও ডিজিটাল সিস্টেম আরও সুরক্ষিত করার কাজ করছে। এতে তারা ব্যবহার করছে পস সিস্টেম (পয়েন্ট অব সেলস), স্টক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইত্যাদি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ রিজার্ভ সেনা ও ভেটেরানরা ডাকা হতে পারে, যারা অনেকেই এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

এদিকে কোম্পানিগুলো এখন থেকেই হিসাব রাখছে, কোন কোন কর্মী রিজার্ভ বা ভেটেরান হিসেবে যুদ্ধে ডাক পেতে পারেন। যুদ্ধে রিজার্ভ সেনা ও সাবেক সৈনিকদের ডেকে পাঠানো হলে বিভিন্ন খাতে কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সম্ভাব্য জনবলের ঘাটতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।

সেই বছর খাদ্য সরবরাহের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কোভিড-১৯ কালীন সময়ের মতো পণ্য ঘাটতি ও সীমিত বিক্রির ঘটনা যুদ্ধের সময় ফের তীব্রতর হয়ে দেখা দিতে পারে। সরকার যেমন সাধারণ মানুষকে তিন দিনের খাবার, পানি, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, রেডিও ইত্যাদি রাখার পরামর্শ দিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বড় কোম্পানিগুলোও স্টাফদের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিট বা সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি রাখছে।

টেকনোলজির ওপর নির্ভরতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যেমন স্পেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে টমেটোভর্তি ট্রাক ব্রিটেনে এসেও খোলা যায়নি—কারণ ট্রাকগুলো রিমোট নিয়ন্ত্রিতভাবে লক করা ছিল এবং তা খুলতে স্পেনের সার্ভার সচল লাগত। অত্যাধুনিক ট্রাকের দরজা খুলতে না পারার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাগুলো কীভাবে যুদ্ধকালীন সময়ে ভেঙে পড়তে পারে।

এদিকে ক্রাম্প সতর্ক করেন যে, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোনো নিয়মে না ভেবে এখন থেকেই ‘চিন্তার বাইরে’ এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ শান্তির দীর্ঘ সময়ের অভ্যস্ততা থেকে বের হয়ে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারছে, যে কোনো মুহূর্তে সবকিছু বদলে যেতে পারে। যুদ্ধ এখন আর কেবল সেনাবাহিনীর বিষয় নয় – এটি খাদ্য, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রস্তুতি এখন অত্যাবশ্যক।