ঢাকা ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষুব্ধ বিএনপি: নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরির অভিযোগ

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে বিএনপি গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলটি অভিযোগ করেছে, এ ভাষণের মাধ্যমে ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটি কৌশলগত সুযোগ’ তৈরি করা হয়েছে। একইসঙ্গে তারা বলছে, ভাষণে শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন ড. ইউনূস এবং তিনি একটি ‘বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

গত শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে। এ বক্তব্যের পরপরই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে এবং ভাষণের কড়া সমালোচনা করে এক বিবৃতি দেয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচনের যে সময় প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন সেটি বাস্তবতাজনিত নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সংকট ঘনীভূত হবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী নিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়েছেন।”

বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মূল আপত্তির বিষয়গুলো:

  • এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে আবহাওয়ার সমস্যা, রমজান মাসের প্রচারণা জটিলতা এবং পরীক্ষার মৌসুমে রাজনৈতিক কার্যক্রম—সব মিলিয়ে এটি একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত।
  • ভাষণে বন্দর, করিডোর ইস্যুতে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ম্যান্ডেটের বাইরে’ বলে দাবি করা হয়।
  • বিএনপি মনে করে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনই সবচেয়ে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সময়।

বিশ্লেষকদের মত:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, “এপ্রিল নির্বাচন নির্ধারণের মধ্যে একটি ধরনের ‘জিদ’ এবং ‘ইগো’ কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেন নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব নয়।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া:
যেখানে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন পেছানোর বিরোধিতা করছে, জামায়াতে ইসলামী ও কিছু রাজনৈতিক দল এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ আবার এটিকেই স্বস্তির বিষয় হিসেবে দেখছে—অন্তত একটি তারিখ সরকার জানিয়ে দিয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় বিএনপি:
বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এখন বল সরকারের কোর্টে—দেখা যাক তারা কী করে।”

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রাখাইন করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে বিদেশি সহযোগিতার কথা বলায় রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ভাষণে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না থাকায় বিএনপির অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা কলেজে ছাত্রশিবিরের প্রীতিভোজে সৌহার্দ্যের মিলনমেলা

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষুব্ধ বিএনপি: নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরির অভিযোগ

আপডেট সময় ০৮:৪২:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে বিএনপি গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলটি অভিযোগ করেছে, এ ভাষণের মাধ্যমে ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটি কৌশলগত সুযোগ’ তৈরি করা হয়েছে। একইসঙ্গে তারা বলছে, ভাষণে শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন ড. ইউনূস এবং তিনি একটি ‘বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

গত শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে। এ বক্তব্যের পরপরই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে এবং ভাষণের কড়া সমালোচনা করে এক বিবৃতি দেয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচনের যে সময় প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন সেটি বাস্তবতাজনিত নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সংকট ঘনীভূত হবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী নিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়েছেন।”

বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মূল আপত্তির বিষয়গুলো:

  • এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে আবহাওয়ার সমস্যা, রমজান মাসের প্রচারণা জটিলতা এবং পরীক্ষার মৌসুমে রাজনৈতিক কার্যক্রম—সব মিলিয়ে এটি একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত।
  • ভাষণে বন্দর, করিডোর ইস্যুতে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ম্যান্ডেটের বাইরে’ বলে দাবি করা হয়।
  • বিএনপি মনে করে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনই সবচেয়ে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সময়।

বিশ্লেষকদের মত:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, “এপ্রিল নির্বাচন নির্ধারণের মধ্যে একটি ধরনের ‘জিদ’ এবং ‘ইগো’ কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেন নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব নয়।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া:
যেখানে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন পেছানোর বিরোধিতা করছে, জামায়াতে ইসলামী ও কিছু রাজনৈতিক দল এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ আবার এটিকেই স্বস্তির বিষয় হিসেবে দেখছে—অন্তত একটি তারিখ সরকার জানিয়ে দিয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় বিএনপি:
বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এখন বল সরকারের কোর্টে—দেখা যাক তারা কী করে।”

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রাখাইন করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে বিদেশি সহযোগিতার কথা বলায় রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ভাষণে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না থাকায় বিএনপির অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।