ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এপ্রিলের নির্বাচনের আগে সংস্কার, আস্থা ও প্রস্তুতির কঠিন চ্যালেঞ্জে সরকার

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। তবে এই ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নির্বাচন মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎসবমুখর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী ১০ মাসে একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিতর্কিত সময়সীমা, রাজনৈতিক মতপার্থক্য

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করার কথা বললেও, অভিযোগ উঠেছে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, সরকারের আচরণ ‘বিমাতাসুলভ’ এবং নিরপেক্ষতার অভাব প্রকট। দলটি ইতোমধ্যে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

জামায়াত ইসলামীও আগামী নির্বাচনে ‘সম্ভাব্য ডাকাতির’ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। দলের আমির শফিকুর রহমান বলেন, জাতি আর কোনো সাজানো নির্বাচন চায় না।

নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্বাচন কমিশনের করার কথা থাকলেও, এসব বিষয়ে কাজ খুবই অগ্রসর নয় বলে জানান বিশ্লেষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী। তার মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি কোথায়?

প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, রোজার ঈদের আগেই সংস্কার ও বিচার ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, ‌“জুলাই সনদের আওতায় আমরা আশুকরণীয় সংস্কার কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে চাই।” তবে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—গত ১১ মাসে সংস্কারের দৃশ্যমান কিছুই হয়নি, বরং সময়ক্ষেপণই হয়েছে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে নিরপেক্ষতার আস্থা অর্জন। পক্ষপাতের অভিযোগ থেকেই আইনি ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।”

প্রস্তুতি নেই, তবুও আশাবাদী ইসি

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ অবশ্য জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।”

একসঙ্গে তিন ম্যান্ডেট: সময় পর্যাপ্ত কি না?

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন ম্যান্ডেট পূরণের অঙ্গীকার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এত স্বল্প সময়ে তিনটি লক্ষ্য অর্জন কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে।

রাজনৈতিক ঐক্যমত্যই চাবিকাঠি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে জুলাই সনদসহ সংস্কার চূড়ান্ত করা সম্ভব। তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু বিষয়ে সকল দলের ঐকমত্য না-ও থাকতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন নয়”—তারেক-ইউনূস বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ

এপ্রিলের নির্বাচনের আগে সংস্কার, আস্থা ও প্রস্তুতির কঠিন চ্যালেঞ্জে সরকার

আপডেট সময় ০৮:৫১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। তবে এই ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নির্বাচন মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎসবমুখর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী ১০ মাসে একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিতর্কিত সময়সীমা, রাজনৈতিক মতপার্থক্য

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করার কথা বললেও, অভিযোগ উঠেছে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, সরকারের আচরণ ‘বিমাতাসুলভ’ এবং নিরপেক্ষতার অভাব প্রকট। দলটি ইতোমধ্যে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

জামায়াত ইসলামীও আগামী নির্বাচনে ‘সম্ভাব্য ডাকাতির’ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। দলের আমির শফিকুর রহমান বলেন, জাতি আর কোনো সাজানো নির্বাচন চায় না।

নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্বাচন কমিশনের করার কথা থাকলেও, এসব বিষয়ে কাজ খুবই অগ্রসর নয় বলে জানান বিশ্লেষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী। তার মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি কোথায়?

প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, রোজার ঈদের আগেই সংস্কার ও বিচার ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, ‌“জুলাই সনদের আওতায় আমরা আশুকরণীয় সংস্কার কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে চাই।” তবে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—গত ১১ মাসে সংস্কারের দৃশ্যমান কিছুই হয়নি, বরং সময়ক্ষেপণই হয়েছে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে নিরপেক্ষতার আস্থা অর্জন। পক্ষপাতের অভিযোগ থেকেই আইনি ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।”

প্রস্তুতি নেই, তবুও আশাবাদী ইসি

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ অবশ্য জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।”

একসঙ্গে তিন ম্যান্ডেট: সময় পর্যাপ্ত কি না?

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন ম্যান্ডেট পূরণের অঙ্গীকার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এত স্বল্প সময়ে তিনটি লক্ষ্য অর্জন কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে।

রাজনৈতিক ঐক্যমত্যই চাবিকাঠি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে জুলাই সনদসহ সংস্কার চূড়ান্ত করা সম্ভব। তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু বিষয়ে সকল দলের ঐকমত্য না-ও থাকতে পারে।