ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট ১৩ দিন ধরে বন্ধ, চিকিৎসার বদলে আবাসিক আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত

দেশের একমাত্র আধুনিক সরকারি চক্ষু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ গত ১৩ দিন ধরে কার্যত বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠান এখন আর হাসপাতাল নয়, রূপ নিয়েছে এক ধরনের আবাসিক হোটেলে, যেখানে অবস্থান করছেন ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত কয়েকজন ব্যক্তি।

এই আহতদের জন্য নিয়মিত খাবার সরবরাহ করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, তবে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আছে।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ মে একটি ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সূত্র ধরে ওই আন্দোলনকারীরা চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর হামলা চালিয়ে হাসপাতাল দখলে নেন। এরপর থেকে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কেউ নিরাপত্তার অভাবে আর সেখানে কাজে যোগ দিচ্ছেন না।

চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চেষ্টা চালালেও তেমন কোনো সফলতা আসেনি।

৪ জুন থেকে জরুরি বিভাগ চালু হলেও মূল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। এ অবস্থায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়, যারা আহতদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জানায়, তাদের অধিকাংশের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই, এবং চিকিৎসা সন্তোষজনকভাবে চলছে।

তবে আহতরা হাসপাতাল ছাড়তে রাজি হননি। বরং তারা রিলিজের কাগজ ছিঁড়ে ফেলে, এবং হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন।
তাদের বক্তব্য, ঢাকায় থাকার অন্য কোনো জায়গা নেই, ফলে হাসপাতালই এখন তাদের আশ্রয়স্থল

আহতদের একটি অংশ দাবি করছে, তারা হাসপাতালে থেকেই সরকারকে চাপ দিতে চান, যাতে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি সমস্যা থাকায় তারা গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া কেউ কেউ নিয়োগ, টেন্ডার ও আর্থিক তদবিরেও জড়িয়ে পড়েছেন, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, কেউ কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকেই অজুহাত তৈরি করে হাসপাতালে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন।

সরকার বিষয়টিকে সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচনা করে সময় নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে।
ঈদের আগে আহতদের অনেকেই বাড়ি ফিরে গেলেও রিলিজ নেননি, এবং জানিয়েছেন সুবিধামতো সময়ে তারা আবার ফিরে আসবেন

এদিকে, চিকিৎসা বঞ্চিত হাজারো সাধারণ রোগী ও হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পাওয়ার দাবিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে এখনো কোনো কার্যকর সমাধান দেখা যাচ্ছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

হজে গিয়ে প্রাণ গেছে ২২ বাংলাদেশির

জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট ১৩ দিন ধরে বন্ধ, চিকিৎসার বদলে আবাসিক আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত

আপডেট সময় ০৯:১০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

দেশের একমাত্র আধুনিক সরকারি চক্ষু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ গত ১৩ দিন ধরে কার্যত বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠান এখন আর হাসপাতাল নয়, রূপ নিয়েছে এক ধরনের আবাসিক হোটেলে, যেখানে অবস্থান করছেন ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত কয়েকজন ব্যক্তি।

এই আহতদের জন্য নিয়মিত খাবার সরবরাহ করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, তবে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আছে।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ মে একটি ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সূত্র ধরে ওই আন্দোলনকারীরা চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর হামলা চালিয়ে হাসপাতাল দখলে নেন। এরপর থেকে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কেউ নিরাপত্তার অভাবে আর সেখানে কাজে যোগ দিচ্ছেন না।

চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চেষ্টা চালালেও তেমন কোনো সফলতা আসেনি।

৪ জুন থেকে জরুরি বিভাগ চালু হলেও মূল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। এ অবস্থায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়, যারা আহতদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জানায়, তাদের অধিকাংশের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই, এবং চিকিৎসা সন্তোষজনকভাবে চলছে।

তবে আহতরা হাসপাতাল ছাড়তে রাজি হননি। বরং তারা রিলিজের কাগজ ছিঁড়ে ফেলে, এবং হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন।
তাদের বক্তব্য, ঢাকায় থাকার অন্য কোনো জায়গা নেই, ফলে হাসপাতালই এখন তাদের আশ্রয়স্থল

আহতদের একটি অংশ দাবি করছে, তারা হাসপাতালে থেকেই সরকারকে চাপ দিতে চান, যাতে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি সমস্যা থাকায় তারা গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া কেউ কেউ নিয়োগ, টেন্ডার ও আর্থিক তদবিরেও জড়িয়ে পড়েছেন, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, কেউ কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকেই অজুহাত তৈরি করে হাসপাতালে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন।

সরকার বিষয়টিকে সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচনা করে সময় নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে।
ঈদের আগে আহতদের অনেকেই বাড়ি ফিরে গেলেও রিলিজ নেননি, এবং জানিয়েছেন সুবিধামতো সময়ে তারা আবার ফিরে আসবেন

এদিকে, চিকিৎসা বঞ্চিত হাজারো সাধারণ রোগী ও হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পাওয়ার দাবিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে এখনো কোনো কার্যকর সমাধান দেখা যাচ্ছে না।