ঢাকা ১১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আয়রন ডোম ব্যর্থ: ইরানি হামলায় তেল আবিবের সামরিক সদর দপ্তর ধ্বংস

তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে অবস্থিত সামরিক সদর দপ্তরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’কে ব্যর্থ করে এই হামলা চালানো হয় বলে জানায় তেহরান। এতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় একাধিক ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইরান ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিশোধ’ হিসেবে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকায় অবস্থিত মার্গানিট টাওয়ারে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এই টাওয়ারটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)-এর অন্যতম প্রধান অপারেশন সদর দপ্তর। হামলার সময় বিস্ফোরণের শব্দে গোটা তেল আবিব কেঁপে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছোটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা গেছে।

ইসরায়েলের পক্ষে এখন পর্যন্ত হতাহতের সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, হামলায় কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ধরা হয় ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে। এটি শত্রু পক্ষের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট শনাক্ত করে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম। ইসরায়েল দাবি করে, এর সফলতা হার প্রায় ৯০ শতাংশ।

কিন্তু এবার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর হৃদপিণ্ডে ঢুকে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে

এই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে হামলা-প্রতিহামলার ধারা চলতে থাকলে তা পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জড়াতে পারে আরও দেশকে।

ইতিমধ্যে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ইরানের “আত্মরক্ষার অধিকার”কে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানকে “আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে, বিশেষত তেল আবিব ও তেহরানে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের মেরুকরণ ও সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইসরায়েলের ‘অপরাজেয়’ ভাবমূর্তি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যুদ্ধ এখন আর সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই, বরং নগরের হৃদয়ে আঘাত হানছে—তাও বিশ্বের অন্যতম নিরাপত্তা সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে।

সূত্র: NDTV, আল জাজিরা, রয়টার্স, তেহরান টাইমস

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা

আয়রন ডোম ব্যর্থ: ইরানি হামলায় তেল আবিবের সামরিক সদর দপ্তর ধ্বংস

আপডেট সময় ০৯:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে অবস্থিত সামরিক সদর দপ্তরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’কে ব্যর্থ করে এই হামলা চালানো হয় বলে জানায় তেহরান। এতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় একাধিক ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইরান ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিশোধ’ হিসেবে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকায় অবস্থিত মার্গানিট টাওয়ারে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এই টাওয়ারটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)-এর অন্যতম প্রধান অপারেশন সদর দপ্তর। হামলার সময় বিস্ফোরণের শব্দে গোটা তেল আবিব কেঁপে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছোটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা গেছে।

ইসরায়েলের পক্ষে এখন পর্যন্ত হতাহতের সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, হামলায় কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ধরা হয় ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে। এটি শত্রু পক্ষের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট শনাক্ত করে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম। ইসরায়েল দাবি করে, এর সফলতা হার প্রায় ৯০ শতাংশ।

কিন্তু এবার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর হৃদপিণ্ডে ঢুকে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে

এই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে হামলা-প্রতিহামলার ধারা চলতে থাকলে তা পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জড়াতে পারে আরও দেশকে।

ইতিমধ্যে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ইরানের “আত্মরক্ষার অধিকার”কে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানকে “আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে, বিশেষত তেল আবিব ও তেহরানে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের মেরুকরণ ও সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইসরায়েলের ‘অপরাজেয়’ ভাবমূর্তি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যুদ্ধ এখন আর সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই, বরং নগরের হৃদয়ে আঘাত হানছে—তাও বিশ্বের অন্যতম নিরাপত্তা সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে।

সূত্র: NDTV, আল জাজিরা, রয়টার্স, তেহরান টাইমস