মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা ও সামরিক সহিংসতার জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শনিবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর ৫১তম অধিবেশনে দেওয়া এক জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তোলেন। টিআরটি গ্লোবালের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল এখন কেবল একটি দখলদার রাষ্ট্র নয়, বরং পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইরানের ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “ইরানে ইসরায়েল যা করছে, তা পুরোপুরি গুন্ডামি।” এই আগ্রাসনকে তিনি কোনো সামরিক কৌশল নয়, বরং “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের” প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলি সরকার আঞ্চলিক শান্তির সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “তারা হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা, স্কুল—সব ধরনের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করছে। শিশু, নারী, নিরীহ মানুষ এতে প্রাণ হারাচ্ছে।”
গাজা উপত্যকার অবস্থা তুলে ধরে এরদোয়ান বলেন, “অবরুদ্ধ গাজা আজ নাৎসি বাহিনীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের চেয়েও ভয়াবহ। নেতানিয়াহু যে জাতিবিদ্বেষী স্বপ্নে বিভোর, তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে কারও কোনো লাভ নেই।”
১৩ জুন ইরানে চালানো ইসরায়েলি হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দিয়ে এরদোয়ান বলেন, “এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক আলোচনায় কূটনৈতিক পথ বন্ধ করে দিতে চায়। একদিকে তারা নিজের পারমাণবিক অস্ত্র গোপন রাখছে, অন্যদিকে অন্যদের পথ আটকে দিচ্ছে—এটাই সবচেয়ে বড় ভণ্ডামি।”
তিনি আরও বলেন, “নেতানিয়াহুর সরকার ও তার হত্যাকারী বাহিনী কোনো কূটনৈতিক সমাধান চায় না। তারা কেবল আগ্রাসন ও ধ্বংসের পথে হাঁটছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ইসরায়েলের উসকানিমূলক ভাষা ও হামলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বিশ্বনেতাদের।”
এরদোয়ানের এই বক্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন ইসরায়েল একের পর এক হামলা চালাচ্ছে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সর্বশেষ ইরানে। এসব ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্য আবারও এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।