দেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বর্তমানে শূন্যের কোটায় বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতিমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তার মতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পেছনে দলটির দীর্ঘদিনের দুঃশাসন, দুর্নীতি এবং দমননীতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এই পতনের একক দায়ভার তিনি দিয়েছেন দলপ্রধান শেখ হাসিনার কাঁধে।
অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, “আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কিংবা অতীতের কর্মকাণ্ড—দুটোর কোনোটিতেই জনগণের জন্য কোনো ইতিবাচক বার্তা ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে যে স্বৈরশাসন এবং জবাবদিহিহীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা থেকেই আজকের এই পরিণতি। দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এখন তারা নিজের চরিত্র বদলাতে পারে কি না, আর সেটা সময়ই বলে দেবে।”
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর যেমন আত্মসমালোচনায় ব্যর্থ হয়েছিল, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার আমলেও সেই একই ভুল বারবার করেছে। তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের হত্যার পেছনেও দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি বড় ভূমিকা রেখেছিল। মুশতাকসহ অনেক বিদ্রোহী মুখ তখন দলের ভেতরেই ছিল। একইভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও ছিল আত্মপ্রবঞ্চনা, আত্মঘাতী দমননীতি ও দুর্নীতির আশ্রয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়ার পরিণতিই আজকের নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।”
আলোচনায় উঠে এসেছে, দলটির নেতাকর্মীরা অতীতের অপরাধের জন্য এখনো অনুশোচনার কোনো লক্ষণ দেখায়নি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দলটির বিচারের দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শেখ মুজিবের মূর্তি ভাঙা হয়েছে, দলীয় নামকরণকৃত স্থাপনাগুলোর নাম বদলানো হয়েছে। এমনকি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ফাউন্ডেশন পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। এগুলো শুধু রাজনৈতিক প্রতীক নয়, বরং গভীর প্রতিশোধপরায়ণতারও প্রতিচ্ছবি।”
অধ্যাপক ফজলুল হকের মতে, “যদি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকতে চায়, তবে তাদের সম্পূর্ণ নতুন রূপে, দায় স্বীকার করে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগণের কাছে ফিরতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এই দলটির আর কোনো স্থান থাকবে না।”
এ সময় তিনি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের সতর্ক করে বলেন, “আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। একদলীয় আধিপত্য নয়, বরং বহুমতের সহাবস্থান ও জনগণের মতামতকেই গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের স্বার্থে ভিন্নমতকে দমন না করে তাকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করাই হবে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ।”
এ বক্তব্যগুলোতে স্পষ্ট, রাজনৈতিক পরিবর্তনের এ সময়টিতে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও আত্মসমালোচনা কতটা জরুরি তা উঠে এসেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নতুন মোড় নেবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।