নওগাঁয় কলেজছাত্রীদের আপত্তিকর মেসেজ পাঠানোসহ অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব স্ক্রিনশটে ছাত্রীদের ওড়না ছাড়াসহ বিভিন্ন সাজে দেখার আবদার করতে দেখা গেছে অধ্যক্ষ সামসুল হককে।ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলো যাচাই সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকরা।ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটগুলোর একটিতে দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক তার ছাত্রীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করছেন। প্রশংসার এক পর্যায়ে ছাত্রীকে সামসুল হক লেখেন, ‘আরও সুন্দরী ছবি আছে তোমার’। উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আর নেই স্যার। আমি সুন্দর না। আমার যা মনে হয়’। তখন সামসুল হক লেখেন, ‘আছে আছে, ওড়না ছাড়া’। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেই স্যার, স্যরি স্যার’। তাৎক্ষণিক সামসুল হক বলেন, ‘কলেজে দেখেছি তো’। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, ‘না স্যার। স্যরি। নেই স্যার। মাফ করবেন’। এরপর সামসুল হক বলেন, ‘ওকে, সামনেই দেখবো। অনেক অনেক অনেক ভালো থেকো। বাই’।এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেসেঞ্জারের এই কথোপকথন দুই বছর আগের। ওই সময়ে বিএমসি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন সামসুল হক স্যার। সেখানে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কলেজে যাতায়াতের সময় প্রায়ই উনি (অধ্যক্ষ) আমার সঙ্গে কথা বলতেন। এভাবে একদিন আমার সঙ্গে ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হন। এরপর ফেসবুকে কোনো ছবি স্টোরি দিলে অশ্লীল মন্তব্য করতেন। একপর্যায়ে উনি আমার কাছে থেকে ওড়না ছাড়া ছবি চান। ওই মুহূর্তে তাকে ব্লক করে স্ক্রিনশট রেখে দিই।’এতদিন নীরব থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর বিএমসি কলেজ থেকে নওগাঁ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি হয়ে আসেন সামসুল হক। এদিকে ২০২৪-২৫ সেশনে এখানে ভর্তি হতে হয়েছে আমাকেও। তাই শতচেষ্টা করেও ভয়ে এতদিন নীরব ছিলাম। হঠাৎ ফেসবুকে সামসুল স্যারের সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রীর স্ক্রিনশট ভাইরাল হতে দেখে আমিও প্রতিবাদ জানালাম। উনি (অধ্যক্ষ) অনেক ছাত্রীর সঙ্গে এমন অন্যায় করেছেন।’ভাইরাল হওয়া আরেক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর ফেসবুকের স্টোরিতে শেয়ার করা ছবিতে ‘অতীব চমৎকার’ লিখে প্রশংসা করেছেন অধ্যক্ষ সামসুল হক। গত ৩১ মার্চে মেসেঞ্জারের নোটে ওই শিক্ষার্থী একটি হিন্দি গান সেট করে লেখেন, ‘কিছু মানুষের সাথে দূরত্ব হওয়া ভীষণ দরকার’। ওই নোটের রিপ্লাই দেন সামসুল হক। তিনি ওই শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করে লেখেন, ‘আমি কি তার মধ্যে?’।এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এখানকার সাহিত্য- সংস্কৃতির সঙ্গে আমি জড়িত। কলেজে নাচের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার পর একদিন প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার পর মাঝেমধ্যেই স্যার আমাকে মেসেজ পাঠাতেন। এরপর কোথাও দেখা হলেই উনি (অধ্যক্ষ) আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সৌন্দর্যের প্রশংসা করতেন। তার কথাবার্তাসহ তাকানোর ধরন পুরোটাই অশ্লীল।’আলোচিত আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় এক ছাত্রীর প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করে অধ্যক্ষ সামসুল হক বলেন, ‘নতুন বউ সাজে দেখা করলে না?’। উত্তরে ছাত্রী বলেন, ‘স্যার ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। স্টল থেকে বের হওয়ার সময় পাইনি। আজকে আমাদের স্টলে সবচাইতে বেশি সেল হইছে’। এরপর সামসুল হক লেখেন, ‘আমি তোমার বিউটি (সৌন্দর্য) থেকে বঞ্চিত হলাম’। উত্তরে ওই ছাত্রী বলেন, ‘কেন স্যার? দেখা হইছিল তো আপনার সঙ্গে। তবে আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংক ইউ স্যার। এত সুন্দর একটা আয়োজন করার জন্য। আমরা অনেক এনজয় করেছি’। উত্তরে অধ্যক্ষ লেখেন, ‘আমাকে দেখা দিলে আমিও করতাম’। এবার জবাবে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘স্যরি স্যার, আজকে খুবই ব্যস্ত সময় কেটেছে’। এবার সামসুল হক প্রশ্ন করেন, ‘কবে দেখা দিবে ওই একই সাজে?’এ কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী নওগাঁ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অধ্যক্ষ সামসুল স্যার প্রায়ই আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার আবদার করতেন। এসব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। একপর্যায়ে বিষয়টি বুঝতে পারলে হঠাৎই তিনি একদিন আমাকে কলেজের রোভারসহ সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বের করে দেন। শুধু তাই নয়, আমাকে কলেজ থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক লিপি বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন শিক্ষকের মানসিকতা কতটা নোংরা হলে সে এই ধরনের অশ্লীল প্রস্তাব তার ছাত্রীদের দিতে পারে! কলেজ অধ্যক্ষের এসব স্ক্রিনশট ভাইরাল হওয়ার পর মেয়েকে ক্লাসে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। এই অধ্যক্ষ যতদিন থাকবে, আমি আমার মেয়েকে কলেজে পাঠাবো না। অবিলম্বে অধ্যক্ষ সামসুল হককে বহিষ্কার করতে হবে।’অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে সাংবাদিক পরিচয়ে মেসেজ পাঠালেও প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ছাত্রীকে ওড়না ছাড়া দেখার আবদার অধ্যক্ষের, স্ক্রিনশট ভাইরাল
-
ডেস্ক রিপোর্টঃ
- আপডেট সময় ১০:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ৫৬৩ বার পড়া হয়েছে
জনপ্রিয় সংবাদ