ঢাকা ০১:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরী তরুণীদের ‘টু-লেট ফাঁদ’, বাসায় ডেকে করত সর্বনাশ

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:০০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৩৪ বার পড়া হয়েছে

উঠতি বয়সী ২০-২২ বছরের তরুণীদের একটি চক্র। নিজেদের রূপ-লাবাণ্য দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে যুবকদের। আবার কখনো টোপ ফেলত টু-লেট ফাঁদ দিয়ে। ফেসবুকে টু-লেট গ্রুপ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো বাসা ভাড়ার। এরপর বিজ্ঞাপন দেখে যারা সাড়া দিত তাদের মধ্যে কলেজ-ইউনির্ভাসিটিতে পড়ুয়া যুবকদের টার্গেট করা হতো। পরে যারা বাসা দেখতে যেত তাদেরই ব্ল্যাকমেইল করত এসব উঠতি বয়সী তরুণীরা। একপর্যায়ে মারধর করে সর্বস্ব লুট করে নিত। এখানেই শেষ নয়, তাদের এই অপকর্ম যেন কেউ না জেনে যায় সে জন্যও নেওয়া হতো অপকৌশল। আটকে রাখা যুবকদের ছেড়ে দেওয়ার আগেই নিজেদের মুঠোফোনে ধারণ করা হতো অশ্লীল ভিডিও। হুমকি দেওয়া হতো ঘটনা বলে দিলেই ভিডিও ভাইরাল করে দেবে তারা। এমনকি ফোনের ভিডিও অন করে যুবকদের বলতো খারাপ কাজ করতে এসেছি এমন জবানবন্দি দিতে। সম্প্রতি বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে এই তরুণীদের খপ্পরে পড়েন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। টু-লেট দেখে কল দিলে বলা হয় সাবলেট বাসা। এক রুম ভাড়া দেবেন তারা। বাসা দেখতে গেলেই প্রতারক তরুণীদের ফাঁদে পড়ে নাজমুল হাসান। এ সময় ভিডিও ধারণ, মারধর ও ফোন, ল্যাপটপ সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা এবং বুথ থেকে আরও ২৫ হাজার টাকা লুটে নেয় তারা। ময়মনসিংহ শহরে এই ঘটনার পরই সামনে আসে বিষয়টি। নাজমুল ভয় না পেয়ে সরাসরি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের ২ তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪ তরুণী ও ৪ তরুণ। তারা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নগরের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।বর্তমানে নগরীর কলেজ রোডের মীরবাড়ি এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন তিনি। সেখানে ট্রেনের শব্দে পড়ালেখার সমস্যা হওয়ায় নতুন বাসার সন্ধান করছিলেন। ভুক্তভোগী নাজমুল জানান, ফেসবুকে ‘টু-লেট ময়মনসিংহ’ লেখা গ্রুপে ব্যাচেলর ১ রুমের সাবলেট ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সেখানে দেওয়া মোবাইল ফোনের নম্বরে ফোন করলে বলা হয় দুই কক্ষের বাসায় এক কক্ষে স্বামী-স্ত্রী থাকেন আরেকটি কক্ষ সাবলেট ভাড়া দেওয়া হবে।তিনি জানন, গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় আমাকে যে কক্ষটি সাবলেট ভাড়া দেওয়া হবে সেটি দেখানোর জন্য ভেতরে ঢোকানো হয়। পরে চারজন নারী ও চারজন যুবক সে রুমে ঢোকেন। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে তারা আমার আইফোন, ল্যাপটপ নিয়ে যায় এবং সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।আমার কাছ থেকে লিখিত একটি জবানবন্দিও নেয় তারা, যেন বোঝাতে পারে আমি এখানে খারাপ কাজ করতে এসে আটকা পড়েছিলাম। এরপর সেই বাসা থেকে বের করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এটিএম বুথে থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে হেলথ অফিসারের গলিতে নামিয়ে দেয়। তারা বলে, এ নিয়ে কাউকে কিছু বললে আমার ক্ষতি হবে। আমি পরে থানায় অভিযোগ জানাই। পুলিশ জানায়, কলেজছাত্রের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। সাবলেট ভাড়ার নামে তরুণকে আটকে মারধর করা বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই তরুণীকে আটক করা হয়।তারা হলেন সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) ও ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েল (১৯)। তাদের দুজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।এর মধ্যে সাদিয়া ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর ফারিয়া তাড়াইল উপজেলার সহিলাটি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এই চক্রের চারজন তরুণী ও চারজন তরুণের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। দুই তরুণীর জিম্মা থেকে কলেজছাত্রের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, এ চক্রের দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই তরুণী চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। নগরীতে এরকম একাধিক চক্র রয়েছে। চক্রটির সাথে বখাটে ছাত্ররাও জড়িত। তরুণীদের এই টু-লেট ফাঁদের ঘটনায় তোলপাড় জেলা শহর। সবার মুখে মুখে এই ঘটনাটি। এদিকে বিষয়টিকে হালকাভাবে না দেখে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান এলাকাবাসীর।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী আন্দোলন: পিআর পদ্ধতির নির্বাচন না হলে রাজপথে নামতে হবে

সুন্দরী তরুণীদের ‘টু-লেট ফাঁদ’, বাসায় ডেকে করত সর্বনাশ

আপডেট সময় ০৯:০০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উঠতি বয়সী ২০-২২ বছরের তরুণীদের একটি চক্র। নিজেদের রূপ-লাবাণ্য দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে যুবকদের। আবার কখনো টোপ ফেলত টু-লেট ফাঁদ দিয়ে। ফেসবুকে টু-লেট গ্রুপ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো বাসা ভাড়ার। এরপর বিজ্ঞাপন দেখে যারা সাড়া দিত তাদের মধ্যে কলেজ-ইউনির্ভাসিটিতে পড়ুয়া যুবকদের টার্গেট করা হতো। পরে যারা বাসা দেখতে যেত তাদেরই ব্ল্যাকমেইল করত এসব উঠতি বয়সী তরুণীরা। একপর্যায়ে মারধর করে সর্বস্ব লুট করে নিত। এখানেই শেষ নয়, তাদের এই অপকর্ম যেন কেউ না জেনে যায় সে জন্যও নেওয়া হতো অপকৌশল। আটকে রাখা যুবকদের ছেড়ে দেওয়ার আগেই নিজেদের মুঠোফোনে ধারণ করা হতো অশ্লীল ভিডিও। হুমকি দেওয়া হতো ঘটনা বলে দিলেই ভিডিও ভাইরাল করে দেবে তারা। এমনকি ফোনের ভিডিও অন করে যুবকদের বলতো খারাপ কাজ করতে এসেছি এমন জবানবন্দি দিতে। সম্প্রতি বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে এই তরুণীদের খপ্পরে পড়েন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। টু-লেট দেখে কল দিলে বলা হয় সাবলেট বাসা। এক রুম ভাড়া দেবেন তারা। বাসা দেখতে গেলেই প্রতারক তরুণীদের ফাঁদে পড়ে নাজমুল হাসান। এ সময় ভিডিও ধারণ, মারধর ও ফোন, ল্যাপটপ সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা এবং বুথ থেকে আরও ২৫ হাজার টাকা লুটে নেয় তারা। ময়মনসিংহ শহরে এই ঘটনার পরই সামনে আসে বিষয়টি। নাজমুল ভয় না পেয়ে সরাসরি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের ২ তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪ তরুণী ও ৪ তরুণ। তারা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নগরের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।বর্তমানে নগরীর কলেজ রোডের মীরবাড়ি এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন তিনি। সেখানে ট্রেনের শব্দে পড়ালেখার সমস্যা হওয়ায় নতুন বাসার সন্ধান করছিলেন। ভুক্তভোগী নাজমুল জানান, ফেসবুকে ‘টু-লেট ময়মনসিংহ’ লেখা গ্রুপে ব্যাচেলর ১ রুমের সাবলেট ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সেখানে দেওয়া মোবাইল ফোনের নম্বরে ফোন করলে বলা হয় দুই কক্ষের বাসায় এক কক্ষে স্বামী-স্ত্রী থাকেন আরেকটি কক্ষ সাবলেট ভাড়া দেওয়া হবে।তিনি জানন, গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় আমাকে যে কক্ষটি সাবলেট ভাড়া দেওয়া হবে সেটি দেখানোর জন্য ভেতরে ঢোকানো হয়। পরে চারজন নারী ও চারজন যুবক সে রুমে ঢোকেন। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে তারা আমার আইফোন, ল্যাপটপ নিয়ে যায় এবং সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।আমার কাছ থেকে লিখিত একটি জবানবন্দিও নেয় তারা, যেন বোঝাতে পারে আমি এখানে খারাপ কাজ করতে এসে আটকা পড়েছিলাম। এরপর সেই বাসা থেকে বের করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এটিএম বুথে থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে হেলথ অফিসারের গলিতে নামিয়ে দেয়। তারা বলে, এ নিয়ে কাউকে কিছু বললে আমার ক্ষতি হবে। আমি পরে থানায় অভিযোগ জানাই। পুলিশ জানায়, কলেজছাত্রের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। সাবলেট ভাড়ার নামে তরুণকে আটকে মারধর করা বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই তরুণীকে আটক করা হয়।তারা হলেন সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) ও ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েল (১৯)। তাদের দুজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।এর মধ্যে সাদিয়া ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর ফারিয়া তাড়াইল উপজেলার সহিলাটি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এই চক্রের চারজন তরুণী ও চারজন তরুণের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। দুই তরুণীর জিম্মা থেকে কলেজছাত্রের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, এ চক্রের দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই তরুণী চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। নগরীতে এরকম একাধিক চক্র রয়েছে। চক্রটির সাথে বখাটে ছাত্ররাও জড়িত। তরুণীদের এই টু-লেট ফাঁদের ঘটনায় তোলপাড় জেলা শহর। সবার মুখে মুখে এই ঘটনাটি। এদিকে বিষয়টিকে হালকাভাবে না দেখে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান এলাকাবাসীর।