পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার এক শিশুর অভিভাবকের সাথে অত্যন্ত অশালীন ভাষা ব্যবহার ও দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ঘটা এই ঘটনার একটি বিতর্কিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, চিকিৎসক আবুল কাশেম চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা ও স্বজনদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ, অপমানজনক ও হুমকিমূলক ভঙ্গিতে কথা বলছেন।
স্থানীয় ভাষায় তাঁকে বলতে শোনা যায়— এই ব্যাটা থানায় যায় পড়ে রহিবো। বুঝিস নাই! কাগজ খান নিয়ে থানাত যায় পড়ে রহিস। কি বালডা করিস। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটা চিড়িয়াখানা পাইছ। ব্লেড কিনে নিয়ে বাড়ি গিয়ে বাল কামাইও। মান-সম্মান তোমাদের কিচ্ছু নাই। এ বেটা ঘুষায়ে নাক ফাটায় ফেলবো, একই সাথে চিকিৎসাও দিব। কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ ও নেটিজেনদের ক্ষোভের বিতর্কিত ভিডিওটি সিভিল সার্জনের নজরে আসার পর রাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসক আবুল কাশেমকে শনিবারের (২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ঘটনার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, কী ঘটেছিল এবং কেন রোগীর পরিবারের সাথে এমন আচরণ করা হয়েছে, তার সঠিক জবাব চেয়ে নোটিশ করা হয়েছে। শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় শনিবারের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আলোচিত, তাই জবাব পাওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, আরএমও পদ থেকে তাকে উপস্থিত সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ডা. রাহিমুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঘটনার দিন সকালে চিকিৎসক পরিদর্শনে এলে মামলার কাগজ চায়। সময় মত দেখাতে না পারায় এই ঘটনা ঘটে বলে শিশুটির বাবা জানিয়েছেন। এরপরই ওই চিকিৎসক তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। নেটিজেনরা মন্তব্য করেছেন, মেডিকেল সাইন্সের সবচেয়ে বড় বিদ্যা হল কাউন্সেলিং। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকের এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকে তার চিকিৎসা করার রেজিস্ট্রেশন বাতিলেরও দাবি তুলেছেন।এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকায় খেলনা ও চকলেট দেওয়ার প্রলোভনে পাঁচ বছরের এক শিশুকে প্রতিবেশী কণিক রায় নামে এক যুবক ধর্ষণ চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় কান্নাকাটি করলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অভিযুক্ত যুবককে আসামি করে দেবীগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।মামলা ও চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলাকালীন বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসকের হাতে এই অশালীন আচরণের শিকার হয় শিশুটির পরিবার।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক আবুল কাশেম জানান, হাসপাতালে প্রচুর রোগীর চাপ। সবাইকে স্বাভাবিক ভাবে চিকিৎসা দিতে গিয়ে কথার ভঙ্গিতে অপ্রত্যাশিত এ ঘটনাটি ঘটে। যেহেতু ভুল হয়েছে, তাই আমি এ ঘটনায় ক্ষমা প্রত্যাশা করছি।
ধর্ষণের শিকার শিশুর অভিভাবককে চিকিৎসকের গালিগালাজ, ভিডিও ভাইরাল!
-
ডেস্ক রিপোর্টঃ
- আপডেট সময় ০৮:৩৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ৫২৬ বার পড়া হয়েছে
জনপ্রিয় সংবাদ