ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৭৬ বার পড়া হয়েছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের সাবেক সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭) নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদ থেকে অবসরের পর রাশিয়ায় পাড়ি জমান তিনি।

 

 

দীর্ঘ পাঁচ মাস নিখোঁজের পর বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার মৃত্যুর খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারকে জানানো হয়।

 

 

 

 

নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ীর সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তিনি রেখে গেছেন চার মেয়ে সন্তান। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে এ বছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোট দুই মেয়ের বয়স মাত্র ৬ ও ৫ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্তব্ধ ও দিশাহারা হয়ে পড়েছে নজরুলের পরিবার।

 

 

 

নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার জানান, নজরুল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত থাকাবস্থায় ২০২০ সালে অবসরে যান। এর আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন কঙ্গোতে। অবসরের পর কিছুদিন বাড়িতে থাকলেও পরে বাঁধাই মালের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসায় বড় লোকসান গুনতে হয়। আর্থিক সংকটে পড়লে স্থানীয় এক দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় ‘শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির’ প্রলোভন দেখান। পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে নজরুল ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয় এবং পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়।

 

 

 

আইরিন বলেন, প্রথমদিকে নজরুল পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলতেন। সেসময় নজরুল বলেন, ‘এখান থেকে দেশে ফেরা আর সম্ভব না। যদি কখনো ফোন বন্ধ দেখায়, সেদিন ধরে নিও আমি আর এ পৃথিবীতে নেই।’

 

 

আইরিন আরও বলেন, পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল কথা হয়। সেদিন তিনি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে যাচ্ছেন বলে জানান। তার কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে বলেন, ‘টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাইনি।

 

 

আইরিন বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পাননি। অবশেষে বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

 

 

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ায় ভালো বেতনের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি আছে, সংসারের অবস্থা ভালো হবে। এসব কথা বলে রাশিয়া পাড়ি জমান। এখন চার মেয়েকে নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব, কিছুই বুঝতে পারছি না।

 

 

নজরুল ইসলামের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম ফকির বলেন, ফরিদ নামের এক দালাল নজরুলকে প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় পাঠায়। নজরুলকে বহু জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ফরিদ সব সময় বলত, ও বেঁচে আছে, নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন শুনলাম, ও আর বেঁচে নেই। সরকার যেন অন্তত লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।

 

 

অভিযুক্ত ফরিদ হোসেন বলেন, আমি নজরুলকে রাশিয়ায় পাঠাইনি। সে গেছে বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামক একটি এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। সে সব জেনে-বুঝেই গিয়েছিল, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে কাজ করবে বলে জানত নজরুল। এমনকি নো অবজেকশন সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরও করেছে। গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে নজরুল মারা গেছে। এখানে আমার দোষ দিয়ে লাভ কী?

 

 

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বাসে ছাত্রশিবিরের স্টিকার, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

‘যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’

আপডেট সময় ১০:৩৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের সাবেক সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭) নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদ থেকে অবসরের পর রাশিয়ায় পাড়ি জমান তিনি।

 

 

দীর্ঘ পাঁচ মাস নিখোঁজের পর বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার মৃত্যুর খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারকে জানানো হয়।

 

 

 

 

নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ীর সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তিনি রেখে গেছেন চার মেয়ে সন্তান। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে এ বছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোট দুই মেয়ের বয়স মাত্র ৬ ও ৫ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্তব্ধ ও দিশাহারা হয়ে পড়েছে নজরুলের পরিবার।

 

 

 

নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার জানান, নজরুল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত থাকাবস্থায় ২০২০ সালে অবসরে যান। এর আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন কঙ্গোতে। অবসরের পর কিছুদিন বাড়িতে থাকলেও পরে বাঁধাই মালের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসায় বড় লোকসান গুনতে হয়। আর্থিক সংকটে পড়লে স্থানীয় এক দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় ‘শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির’ প্রলোভন দেখান। পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে নজরুল ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয় এবং পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়।

 

 

 

আইরিন বলেন, প্রথমদিকে নজরুল পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলতেন। সেসময় নজরুল বলেন, ‘এখান থেকে দেশে ফেরা আর সম্ভব না। যদি কখনো ফোন বন্ধ দেখায়, সেদিন ধরে নিও আমি আর এ পৃথিবীতে নেই।’

 

 

আইরিন আরও বলেন, পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল কথা হয়। সেদিন তিনি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে যাচ্ছেন বলে জানান। তার কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে বলেন, ‘টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাইনি।

 

 

আইরিন বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পাননি। অবশেষে বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

 

 

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ায় ভালো বেতনের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি আছে, সংসারের অবস্থা ভালো হবে। এসব কথা বলে রাশিয়া পাড়ি জমান। এখন চার মেয়েকে নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব, কিছুই বুঝতে পারছি না।

 

 

নজরুল ইসলামের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম ফকির বলেন, ফরিদ নামের এক দালাল নজরুলকে প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় পাঠায়। নজরুলকে বহু জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ফরিদ সব সময় বলত, ও বেঁচে আছে, নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন শুনলাম, ও আর বেঁচে নেই। সরকার যেন অন্তত লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।

 

 

অভিযুক্ত ফরিদ হোসেন বলেন, আমি নজরুলকে রাশিয়ায় পাঠাইনি। সে গেছে বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামক একটি এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। সে সব জেনে-বুঝেই গিয়েছিল, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে কাজ করবে বলে জানত নজরুল। এমনকি নো অবজেকশন সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরও করেছে। গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে নজরুল মারা গেছে। এখানে আমার দোষ দিয়ে লাভ কী?

 

 

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।