ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বর্ণকাণ্ড ও মামলার রায়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ—মাঠপর্যায়ে হতাশা-দ্বিধা বাড়ছে

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:২৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৯ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় এবং ভল্ট থেকে বিপুল স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় দলটির ভেতরে নতুন করে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে অস্বস্তি ও হতাশার মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মাঠপর্যায়ের অনেকে বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তারা নিজেরাই এখন গ্রেফতার-ঝুঁকিতে। শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি ও নাশকতার মামলা ঝুলছে। তারা লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হলেও দলীয় প্রধানকে ঘিরে একের পর এক নেতিবাচক খবর তাদের আরও বিব্রত করছে।

তাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ যদি সত্যিই পরিবারের সম্পদ হয়ে থাকে, তাহলে তা আয়কর নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এত বিতর্ক তৈরি হতো না। এতে নেতাকর্মীদের আস্থা ও নৈতিক অবস্থান এখন বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, এই ঘটনাগুলোতে আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলছেন—বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আদৌ এত সম্পদের প্রয়োজন ছিল কি না। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও এসব ঘটনা দলটির ইতিহাসে নেতিবাচক ছাপ রেখে যাবে বলেও মত দিচ্ছেন অনেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতেন। তাই দুর্নীতি বা অনিয়মের খবরে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের বক্তব্য, দলের প্রধানের এ ধরনের আচরণ নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, তৎকালীন সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্লট দুর্নীতি মামলার রায় তারই একটি ছোট অংশ। আরও কয়েকটি মামলায় পরিবারসহ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে—যেখানে আয়-উৎস অস্পষ্ট, কর ফাঁকি এবং ডকুমেন্টেশনহীন সম্পদের বিষয়ও উঠে এসেছে।

৮৩২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রায় আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা বহুবার দাবি করেছেন যে তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ নেই। তখন প্রশ্ন উঠছে—তাহলে এত স্বর্ণ কেন, এবং তা আয়কর নথিতে উল্লেখ করা হয়নি কেন?

এ ছাড়া তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের অনেকে ৫ আগস্টের আগে-পরে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়লেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা আজ চাপে পড়েছেন—এ বিষয়েও দলটির মধ্যে ক্ষোভ আছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দল এখন পুরোপুরি দিশাহীন। হাইকমান্ড থেকে কোনো কার্যকর দিকনির্দেশনা নেই। অপ্রস্তুত কর্মসূচি পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। তার ওপর দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলার রায় দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক পথনকশা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইতিহাস বিকৃতির কোনো সুযোগ নেই, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন: চসিক মেয়র

স্বর্ণকাণ্ড ও মামলার রায়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ—মাঠপর্যায়ে হতাশা-দ্বিধা বাড়ছে

আপডেট সময় ১০:২৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় এবং ভল্ট থেকে বিপুল স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় দলটির ভেতরে নতুন করে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে অস্বস্তি ও হতাশার মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মাঠপর্যায়ের অনেকে বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তারা নিজেরাই এখন গ্রেফতার-ঝুঁকিতে। শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি ও নাশকতার মামলা ঝুলছে। তারা লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হলেও দলীয় প্রধানকে ঘিরে একের পর এক নেতিবাচক খবর তাদের আরও বিব্রত করছে।

তাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ যদি সত্যিই পরিবারের সম্পদ হয়ে থাকে, তাহলে তা আয়কর নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এত বিতর্ক তৈরি হতো না। এতে নেতাকর্মীদের আস্থা ও নৈতিক অবস্থান এখন বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, এই ঘটনাগুলোতে আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলছেন—বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আদৌ এত সম্পদের প্রয়োজন ছিল কি না। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও এসব ঘটনা দলটির ইতিহাসে নেতিবাচক ছাপ রেখে যাবে বলেও মত দিচ্ছেন অনেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতেন। তাই দুর্নীতি বা অনিয়মের খবরে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের বক্তব্য, দলের প্রধানের এ ধরনের আচরণ নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, তৎকালীন সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্লট দুর্নীতি মামলার রায় তারই একটি ছোট অংশ। আরও কয়েকটি মামলায় পরিবারসহ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে—যেখানে আয়-উৎস অস্পষ্ট, কর ফাঁকি এবং ডকুমেন্টেশনহীন সম্পদের বিষয়ও উঠে এসেছে।

৮৩২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রায় আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা বহুবার দাবি করেছেন যে তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ নেই। তখন প্রশ্ন উঠছে—তাহলে এত স্বর্ণ কেন, এবং তা আয়কর নথিতে উল্লেখ করা হয়নি কেন?

এ ছাড়া তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের অনেকে ৫ আগস্টের আগে-পরে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়লেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা আজ চাপে পড়েছেন—এ বিষয়েও দলটির মধ্যে ক্ষোভ আছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দল এখন পুরোপুরি দিশাহীন। হাইকমান্ড থেকে কোনো কার্যকর দিকনির্দেশনা নেই। অপ্রস্তুত কর্মসূচি পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। তার ওপর দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলার রায় দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক পথনকশা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।