বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ফুসফুসে সংক্রমণজনিত জটিলতা থেকে শ্বাসকষ্টে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমেই গুরুতর রূপ নিচ্ছে। নিউমোনিয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের জটিলতা মিলিয়ে একটি রোগের চিকিৎসা আরেকটির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে তাঁর মেডিকেল বোর্ড। শনিবার সকাল পর্যন্ত তাঁর শারীরিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নতি হয়নি।
হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত সংকটময়’। চিকিৎসকদের সকালের ব্রিফিংয়েও তাঁর অবস্থাকে অস্থিতিশীল বলা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় জানিয়েছেন, মায়ের সংকটময় অবস্থায় তাঁরও ফিরে আসার গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত এককভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। পরিস্থিতি অনুকূল হলেই দেশে ফেরার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তারেক রহমান আরও জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এবং বন্ধুপ্রতীম কয়েকটি রাষ্ট্র উন্নত চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর দোয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। তিনি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন। তাঁর বিবৃতিতে প্রকাশিত সৌজন্যতা ও মানবিকতার জন্য তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
চিকিৎসক সূত্র জানায়, মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসার অগ্রগতি মূল্যায়ন করছে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক অবনতির পর শুক্রবার রাত থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকার উপদেষ্টা ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। হাসপাতালের আশপাশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর অবস্থানও লক্ষণীয়।
গত রোববার (২৩ নভেম্বর) গুরুতর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। লন্ডনে থাকা তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমানও হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন। পরে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও বিদেশে চিকিৎসায় বাধা ছিল। ওই সরকারের পতনের পর তিনি মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়ে কয়েক মাস পর দেশে ফেরেন।
এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা আবার সংকটাপন্ন হওয়ায় দল ও পরিবার নতুন করে উৎকণ্ঠায় পড়েছে।

























