লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের বসতঘরে আগুনে পুড়ে শিশু আয়েশা আক্তার সানজু (৭) মারা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, টিনসেট ঘরের দুটি দরজায় বাইরে থেকে তালা মেরে দুর্বৃত্তরা চারপাশে পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
এ ছাড়া বেলাল ও তার দুই মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতি (১৭) ও সামিয়া আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। এরমধ্যে স্মৃতি ও বিথিকে ঢাকা মেডেকেল কলেজের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু ও যুগ্ম-আহবায়ক হাছিবুর রহমান বিবৃতি জানিয়েছেন।
জেলা বিএনপির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এটি একটি জঘন্য, অমানবিক ও কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা, যা দেশব্যাপী বিরোধী রাজনৈতিক মত দমনের ধারাবাহিকতারই বহিঃপ্রকাশ। শিশু হত্যাসহ এমন বর্বর ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হয় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ভুক্তভোগী বেলাল চরমনসা গ্রামের মৃত নরুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় সুতারগোপ্তা বাজারের সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী। বাজারের পশ্চিম পাশেই তাদের বাড়ি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বেলালের মা হাজেরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নাতনি সানজু ঘুমের মধ্যেই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। দুটি দরজাতেই তালা লাগানো থাকায় তাকে বাঁচাতে পারিনি। আমার অন্য দুই নাতনির অবস্থাও খারাপ। আল্লাহ তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুক। কে বা কারা কি কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবারের কেউই।’
হাজেরা বেগম ও তার পুত্রবধূ জেসমিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘরের একটি কক্ষে সালমা, সামিয়া ও সানজু ঘুমায়। তার চার মাস বসয়ী আবির হোসেন ও ৬ বছর বয়সী হাবিবকে নিয়ে বেলাল ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার আলাদা ঘুমায়। রাতে সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আরেকটি ঘরের জানালা দিয়ে বেলালের ঘরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দ্রুত বেলালের মা ও ভাবি ঘর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু বেলালের ঘরের দুটি দরজাতেই তালা মারা ছিল। এজন্য তারা ঘরে ঢুকতে পারেনি। একপর্যায়ে ঘরের দরজা ভেঙে বেলাল বের হয়ে আসে। নাজমা তার দুই ছেলে আবির ও হাবিবকে নিয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু সানজু, সামিয়া ও সালমা বের হতে পারেনি। পরে সামিয়া ও সালমাকে দগ্ধ অবস্থায় বের করতে পারলেও সানজু ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যায়।
হাজেরা বেগমসহ স্থানীয়দের দাবি, দুর্বৃত্তরা টিনসেট ঘরের দুটি দরজায় তালা দিয়ে চারপাশে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বেলালের ভাবি জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আগুনের বিষয়টি টের পেয়েই চিৎকার করি। আশেপাশের লোকজন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আহত বিথি ও স্মৃতি ঢাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার দাস জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটি শিশু পুড়ে মারা গেছে। দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত চলছে। এর আগে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’ কে বা কারা কি কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি ন্যক্কারজনক ও মর্মান্তিক। বেলালের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার রাজনৈতিক ও স্থানীয় বিরোধ রয়েছে। তবে কে বা কারা ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘যে বা যারা ভয়াবহ এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদেরকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করতে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।




















