ভোলার চরফ্যাশনে তিন সন্তান ও দুই মেয়ে থাকার পরও ৯০ উর্ধ্ব বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই মেললো ছেলের গোয়াল ঘরে। সন্তানরা ঘরে ঠাঁই না দেয়ায় বৃদ্ধ মা উলফৎ নেছা আশ্রয় নেন মেঝো ছেলে নিরবের ঘোয়াল ঘরে। গরু রাখার পাশাপাশি ওই বৃদ্ধ মা কয়েক মাস যাবত দিনযাপন করছেন গোয়াল ঘরের মেঝেতে চটের বিছানা পেতে।
উপজেলার শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই ছেলেদের প্রতি ধিক্কার জানান হাজার হাজার নেটিজেন।
ভিডিওতে দেখা যায় বৃদ্ধ মা উলফৎ নেছা ছেলের গোয়াল ঘরে চটের বিছনায় শুয়ে আছেন। আশেপাশে গরু বেধে রাখা আর অন্য পাশে কাপড়ের প্রাচীর দিয়ে বৃদ্ধ মায়ের আবাসস্থল।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) তিনি ওই বৃদ্ধের বাড়িতে ছুটে গিয়ে বৃদ্ধের ভরণপোষণের সকল দ্বায়িত্বভার নেন এবং তিনি বৃদ্ধকে তার বড় মেয়ে ফজিলত বেগমের জিম্মায় রেখে আসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ উলফৎ নেছার ঘরে তিন ছেলেও ও দুই মেয়ে। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী খলিলুর রহমান মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তার স্বামীর ওয়ারিশি পাওনা ঘর ভিটে তিন সন্তানের নামে লিখে নেন।
স্বামীর শেষ সম্বল ঘর ভিটে হারিয়ে তার ঠাঁই হয় তিন সন্তান আবদুস সহিদ, মো. নিরব ও মো. বাছেদের ওপর। দিনমুজর সন্তানরা অভাবের সংসারে টানাপোড়নে কর্মের সন্ধানে ছুটে যান ঢাকা ও চট্টগ্রামে। পুত্রবধুদের দোটানায় পড়ে সর্বশেষ তার ঠাঁই মেলে মেঝো ছেলে নিরবের ঘরে। বৃদ্ধ মা বিছনায় মলমুত্র ত্যাগ করে এমন অজুহাত দিয়ে ছেলে ও পুত্রবধু নাহার মিলে তাকে বসত ঘরের পাশে মাটির গোয়াল ঘরের মেঝেতে চটের বিছানায় থাকতে দেন।
ছেলে নিরব জানান, ‘তিনি পেশায় দিনমুজুর। মা অনেক বৃদ্ধ। তাই সে বিছনায় মলমুত্র ত্যাগ করতেন তাই গোয়াল ঘরের পাশে থাকতে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত তাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও খাবার খাওয়ানো হতো।’
শশীভূষণ থানার ওসি তারিক হাসান রাসেল জানান, ‘সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখার পরে ওই বৃদ্ধের ছেলেকে থানায় ডেকে এনে তার মাকে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা সারমিন মিথি জানান, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


















