ঢাকা ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ’ ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সাথে জড়িত: পীর সাহেব চরমোনাই

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:০৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫২২ বার পড়া হয়েছে

 

 

আজ (২৫ অক্টোবর, শনিবার) দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি সকল সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সেমিনার-২০২৫। এতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ অনেকে।

 

সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ’র উদ্যোগে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুফতি রেজাউল করিম আবরার। প্রবন্ধ পাঠ করেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব ও শিক্ষা অধিকার সংসদের উপদেষ্টা, ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম। তাঁর উপস্থাপিত প্রবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষায় নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্ব, শিক্ষাকর্মীর যোগ্যতার মানদণ্ড এবং পাঠ্যপুস্তক পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এবং বলা হয় নৈতিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই।

 

 

সেমিনার থেকে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

 

 

১. দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

 

২. নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

 

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ৯২% মুসলমানের দেশ। সুতরাং তাদের অধিকার বাস্তবায়ন করা সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের সুযোগ হলে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃজন করে তা বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।

 

জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা হলো একটা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবসভ্যাতার ফাইন্ডেশন। ধর্মীয় শিক্ষা হলো সে ফাউন্ডেশনের মূল শক্তি। একটা জাতি ধ্বংস করার অধিকার ড. ইউনূস আপনার নেই।

 

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, সৈয়দ মো. রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন এখনই দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সকল দল মিলে সম্মিলিত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এ ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সাথে জড়িত, তাই আমরা যতটুকু কঠোর হওয়া দরকার, ততটুকুই হব ইনশাআল্লাহ।

 

 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য আমাদের সভা-সমাবেশ করতে হবে তা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। তবে আমি বর্তমান সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এখনো বড় আন্দোলনে যাইনি, তবে প্রয়োজন যদি হয় ধর্মীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণে আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব। তাই এখনো বিনয়ী ভাষায় বলছি, অবিলম্বে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।

 

জুলাই যোদ্ধা ও এনসিপির মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৬ বছরের ইসলামি শিক্ষা ও আলেমদেরকে যেভাবে উন মানুষ করে রেখেছে, ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে তা হবে এটা খুবই দুঃখজনক। যে শিক্ষা কালচারকে ধারণ করে না তা একটা জাতির শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না।

 

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এই দেশের ৫% মানুষের মধ্যেও গান চর্চার সংস্কৃতি নেই। আর এদেশের ৯২% মানুষ ইসলাম চর্চা করে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতামতকে উপেক্ষা করে যারা গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কান্ডজ্ঞান নেই বলে অবহিত করেছেন তিনি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

 

এছাড়াও বক্তব্য পেশ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের গভর্নর ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ড. আসিফ মাহতাব উৎস, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, প্রফেসর ডক্টর হাসানুজ্জামান চৌধুরী।

 

অনুষ্ঠানে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের সেমিনার প্রমাণ করল-দেশের সকল মতাদর্শী সংগঠন, শিক্ষক, গবেষক ও রাজেনৈতিক নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় শিক্ষার মহত্ব সম্পর্কে একমত। এই ঐক্যের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি পৌঁছে দিচ্ছি, এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোরালো আহ্বানও জানাচ্ছি। এবং এটাও বলেন যে, সরকার যদি এই গণদাবি উপেক্ষা করে তাহলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেহেরপুরের দু’টি সীমান্ত দিয়ে ৬০ জনকে বিএসএফের হস্তান্তর

‘ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ’ ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সাথে জড়িত: পীর সাহেব চরমোনাই

আপডেট সময় ০৯:০৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

 

 

আজ (২৫ অক্টোবর, শনিবার) দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি সকল সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সেমিনার-২০২৫। এতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ অনেকে।

 

সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ’র উদ্যোগে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুফতি রেজাউল করিম আবরার। প্রবন্ধ পাঠ করেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব ও শিক্ষা অধিকার সংসদের উপদেষ্টা, ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম। তাঁর উপস্থাপিত প্রবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষায় নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্ব, শিক্ষাকর্মীর যোগ্যতার মানদণ্ড এবং পাঠ্যপুস্তক পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এবং বলা হয় নৈতিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই।

 

 

সেমিনার থেকে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

 

 

১. দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

 

২. নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

 

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ৯২% মুসলমানের দেশ। সুতরাং তাদের অধিকার বাস্তবায়ন করা সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের সুযোগ হলে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃজন করে তা বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।

 

জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা হলো একটা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবসভ্যাতার ফাইন্ডেশন। ধর্মীয় শিক্ষা হলো সে ফাউন্ডেশনের মূল শক্তি। একটা জাতি ধ্বংস করার অধিকার ড. ইউনূস আপনার নেই।

 

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, সৈয়দ মো. রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন এখনই দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সকল দল মিলে সম্মিলিত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এ ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সাথে জড়িত, তাই আমরা যতটুকু কঠোর হওয়া দরকার, ততটুকুই হব ইনশাআল্লাহ।

 

 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য আমাদের সভা-সমাবেশ করতে হবে তা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। তবে আমি বর্তমান সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এখনো বড় আন্দোলনে যাইনি, তবে প্রয়োজন যদি হয় ধর্মীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণে আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব। তাই এখনো বিনয়ী ভাষায় বলছি, অবিলম্বে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।

 

জুলাই যোদ্ধা ও এনসিপির মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৬ বছরের ইসলামি শিক্ষা ও আলেমদেরকে যেভাবে উন মানুষ করে রেখেছে, ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে তা হবে এটা খুবই দুঃখজনক। যে শিক্ষা কালচারকে ধারণ করে না তা একটা জাতির শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না।

 

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এই দেশের ৫% মানুষের মধ্যেও গান চর্চার সংস্কৃতি নেই। আর এদেশের ৯২% মানুষ ইসলাম চর্চা করে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতামতকে উপেক্ষা করে যারা গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কান্ডজ্ঞান নেই বলে অবহিত করেছেন তিনি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

 

এছাড়াও বক্তব্য পেশ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের গভর্নর ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ড. আসিফ মাহতাব উৎস, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, প্রফেসর ডক্টর হাসানুজ্জামান চৌধুরী।

 

অনুষ্ঠানে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের সেমিনার প্রমাণ করল-দেশের সকল মতাদর্শী সংগঠন, শিক্ষক, গবেষক ও রাজেনৈতিক নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় শিক্ষার মহত্ব সম্পর্কে একমত। এই ঐক্যের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি পৌঁছে দিচ্ছি, এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোরালো আহ্বানও জানাচ্ছি। এবং এটাও বলেন যে, সরকার যদি এই গণদাবি উপেক্ষা করে তাহলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ।