আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নারী কর্মীদের সংগঠিত ও সক্রিয় প্রচারণাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, জামায়াতের মহিলা কর্মীরা ওয়েলফেয়ার পলিটিকসের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন; অন্যদিকে জামায়াত দাবি করছে, তারা কেবল ভোটারদের সচেতনতা বাড়াতে উঠোন বৈঠক ও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মহিলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, “প্রতিদিন কয়েক হাজার নারী কর্মী মাঠে প্রচারণায় রয়েছেন। তারা উঠোন বৈঠকে গিয়ে ভোটের গুরুত্ব তুলে ধরছেন।” তবে তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের নারী কর্মীরা বাধা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস বেগম অভিযোগ করেছেন, জামায়াতের নারী কর্মীরা আগে তালিমের নামে প্রচারণা চালালেও এখন চাল, ডাল ও অর্থ বিতরণের মতো কার্যক্রমে নেমেছেন। তার ভাষায়, “এটি এক ধরনের ওয়েলফেয়ার পলিটিকস।”
যশোর এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা তদারকি করা বিএনপি নেত্রী বলেন, “জামায়াতের নারী কর্মীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সারাদিন মাঠে কাজ করছেন। আমরা আমাদের কর্মীদের বলেছি, দান-খয়রাত নয়—বিএনপি ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি কর্মসূচি নেবে।”
জামায়াতের মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা ও প্রতিক্রিয়া
নোয়াখালী, নওগাঁ, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন এলাকায় মহিলা জামায়াতের সমাবেশে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার বিএনপিকে সতর্ক করে বলেছেন, “নারী কর্মীদের ওপর হামলা থেকে বিরত থাকুন।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় ভেতর থেকেও সমালোচনা উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এজিএস আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ফেসবুকে লেখেন, “যখন আমাদের মহিলা কর্মীরা কটূক্তি ও আক্রমণের শিকার হন, তখন দলের অফিসিয়াল পেজ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয় না। যারা নিজেদের নারীদের রক্ষা করতে পারে না, তারা অন্য নারীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবে?”
কূটনৈতিক তৎপরতায় মহিলা জামায়াত
নির্বাচনি প্রচারণার পাশাপাশি জামায়াতের মহিলা বিভাগ এখন কূটনৈতিক যোগাযোগেও সক্রিয়। ২০ অক্টোবর মহিলা জামায়াতের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি চিফ বাইবা জারিনার আমন্ত্রণে ইইউ কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গেও বৈঠক করেছে মহিলা জামায়াত। এ বিষয়ে নূরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, “বিদেশি কূটনীতিকরা এখন জামায়াতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আগ্রহী। আমরা দেখাতে চাই, নারীরা আমাদের রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রস্তুত।”
নির্বাচনে নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা
জামায়াত এবার সরাসরি নারী প্রার্থী দেবে কি না, তা এখনো নির্ধারিত নয়। দলীয় সূত্র বলছে, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। নূরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, “বর্তমান পরিবেশে নারী প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক। যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, আমরা নারী প্রার্থী দিতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে যেমন নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন, তেমনি এখনো সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।”
🔹 সারসংক্ষেপে:
মাঠে জামায়াতের নারী কর্মীদের তৎপরতা বিএনপিকে নতুন কৌশল ভাবতে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক মহলে নারীদের উপস্থিতি জামায়াতের রাজনৈতিক বার্তা নতুন মাত্রা পেয়েছে—যা নির্বাচনি সমীকরণে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
 
																			 
										 ডেস্ক রিপোর্টঃ
																ডেস্ক রিপোর্টঃ								 

















