সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ এনেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এখন কোনো একটা দল (জামায়াত) বলছে বিএনপি নির্বাচন পেছাতে চায়। আরে নির্বাচন পেছানোর কথা আপনারাই বলছেন। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে নির্বাচনের কথা বলে আসছি। আমরা তো নির্বাচন পেছানোর কথা একবারও বলিনি। আমরা বারবার বলেছি, নির্বাচনটা অতিদ্রুত করতে হবে। আমি বলব- এসব মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, রিটা রহমান প্রমুখ। সমাবেশে সারা দেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের কাগজে দেখলাম আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বন্ধু মানুষ তাহের নিজের এলাকায় দেওয়া বক্তব্যে আমাদের দোষারোপ করেছেন যে, আমরা নাকি নির্বাচনে বাধা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যতটা বাধা সৃষ্টি হয়েছে, তা আপনারা করেছেন। আপনারা পিআরের দাবি নিয়ে এসেছেন, যেটা আলোচনায় ছিল না। জোট পাকিয়ে রাস্তার মধ্যে আন্দোলন করছেন এবং ধমক দিচ্ছেন আপনারা নির্বাচন হতে দেবেন না। মানুষকে বোকা ভাববেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছিলেন, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। উনার পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিলÑহামলা কোথা থেকে আসবে, কারা করবে? জাতি প্রস্তুত আছে, যে কোনো হামলা প্রতিরোধ করতে। হামলার ভয় দেখিয়ে এ দেশের মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাইÑএ দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়।’
তিনি বলেন, ‘একটা শক্তি আছে, যারা একাত্তর সালে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন একাত্তরকে নিচে নামিয়ে দিতে চায়। তারা একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চায়। শুধু ‘২৪-র আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। ২০২৪-এ যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি। আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না। কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জুলাই সনদে আমরা যে অংশে সই করেছি, তার দায়দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু যেটায় সই করিনি, সেটার দায় আমরা নেব না। সনদে সইয়ের আগে বলেছিলাম, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সেগুলো সই হবে। যেসব বিষয়ে একমত হবে না, সেগুলো নোট অব ডিসেন্ট হিসাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। আমাদের বক্তব্যগুলো বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে। বরং নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে; এটা জনগণের সঙ্গে নিঃসন্দেহে প্রতারণামূলক কাজ।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারতে বসে শেখ হাসিনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। একবারের জন্যও তিনি তার কর্মকাণ্যের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। আজ তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিন। বাংলাদেশের আইনে যে বিচারের মুখোমুখি তাকে হতে হবে, সেই বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করুন। সব সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করবেন না, বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে নির্বাচন হতে হবে। পিআর হবে কী হবে না, সেটা আগামী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোটের কথা বলেছেন, রাজি হয়েছি। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তারপরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। কারণ আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে হাজার কোটি টাকার ওপরে খরচ হবে।’
সমাবেশে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের জুলাই সনদের প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সংসদ প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাদের কথা ভুলিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে হ্রাস করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে; যা অন্য কোনো আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এ দেশের জš§ই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচন ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা প্রতিহত করা হবে।’
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতা একসময় জাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গলাকাটা পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ৫ আগস্টের পর থেকে শিবিরের অনেক সদস্য ছাত্রলীগের ভেতর থেকে বের হয়েছে।
















