গর্ভাবস্থা শুধু শারীরিক পরিবর্তন নয়, একজন নারীর জীবনে আবেগ, আশা এবং নানান চ্যালেঞ্জের সমন্বয়ে গড়া এক নতুন অধ্যায়। গর্ভাবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে শরীর যেমন বদলায়, তেমনি মানসিক অবস্থারও বড় রকম ওঠানামা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। সকালবেলার বমিভাব, হঠাৎ মুড পরিবর্তন থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ সন্তানকে ঘিরে দুশ্চিন্তা—সব মিলিয়ে এই সময়টি হয়ে ওঠে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমবার গর্ভধারণ বা অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ হলে উদ্বেগ আরও বাড়তে পারে। আগে থেকে হতাশা বা উদ্বেগের সমস্যা থাকলে তা গর্ভাবস্থায় তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এ কারণে দরকার নিয়মিত যত্ন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, হালকা ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে প্রেনাটাল ভিটামিন।
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীই উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা মনখারাপ অনুভব করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থাকে অবহেলা করা ঠিক নয়; দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ মা ও গর্ভস্থ শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাক বা ওসিডির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকে হঠাৎ তীব্র ভয়, বুক ধড়ফড় বা অস্বস্তি অনুভব করলেও তা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভাবস্থায় নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করা এবং প্রয়োজন হলে কাছের মানুষ বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত হাঁটা বা যোগব্যায়াম, মাইন্ডফুলনেস চর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ কমানো—এসব অভ্যাস মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকেরা আরও বলেন, যদি দীর্ঘসময় ধরে দুঃখ, ভয় বা অস্থিরতা থাকে, তবে দ্রুতই গাইনি বিশেষজ্ঞ, কাউন্সেলর বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো সহায়তা নিলে গর্ভকালীন শারীরিক ও মানসিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সবশেষে, বিশেষজ্ঞদের বার্তা—গর্ভাবস্থায় উদ্বেগ বা বিষণ্নতা কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং সাধারণ ব্যাপার। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, যত্ন এবং সময়মতো সহায়তা গ্রহণ। নিজের সুস্থতাই অনাগত সন্তানের সুস্থতার প্রথম শর্ত।


























