দুর্নীতির মামলাগুলো থেকে রেহাই পেতে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হেরজগের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রোববার এক ভিডিওবার্তায় তিনি নিজেই এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আমি মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে মাননীয় প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি লিখেছি। আমার আইনজীবীরা সেই চিঠি প্রেসিডেন্টের দপ্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। যারা দেশের মঙ্গল চান, তাদের সবাই এ পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন বলে আশা করি।”
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় চিঠি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এটিকে “বিস্ময়কর ও গুরুতর তাৎপর্যপূর্ণ অনুরোধ” বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট হেরজগ। তিনি জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য ও মতামত পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নেতানিয়াহুর ভিডিওবার্তা প্রকাশের পরপরই তেল আবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন ঘেরাও করে সমাবেশ করেন এবং নেতানিয়াহুর ক্ষমা চাওয়ার প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভে যোগ দেন নেসেটের বিরোধী দলীয় এমপিরাও। এমপি নামা লাজিমি প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বলেন, “যদি প্রেসিডেন্ট এই অনুরোধে সাড়া দেন, তাহলে ইসরায়েল পুরোপুরি একটি ‘বানানা রিপাবলিকে’ পরিণত হবে।”
মুহূর্তেই বিক্ষোভকারীরা স্লোগান তুলতে থাকেন— “ক্ষমা মানে বানানা রিপাবলিক।”
বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর কুশপুতুল ও ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী শিকমা ব্রেসলার বলেন, “তিনি (নেতানিয়াহু) দেশটাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছেন। কোনো মূল্য না দিয়ে, কোনো দায় না নিয়ে এখন তিনি বিচার থেকে অব্যাহতি চাইছেন। ইসরায়েলের জনগণ কখনোই এটি মেনে নেবে না।”
প্রধান বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ এক বিবৃতিতে বলেন, “নেতানিয়াহু কখনোই নিজের অপরাধ স্বীকার করেননি, অনুতাপও প্রকাশ করেননি। তার উচিত এখনই রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া। তাকে ক্ষমা করা উচিত হবে না।”
ইসরায়েলের জেরুজালেম জেলা আদালতে ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতি মামলা চলছে। এক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারাহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দামী মদ, অলঙ্কার ও সিগার গ্রহণ করেছিলেন, যার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আরেক মামলায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে ইতিবাচক প্রচারের বিনিময়ে তিনি অবৈধভাবে সুবিধা দিয়েছেন। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বেজেককে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিতে ঘুষ নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে মামলাগুলোর বিচার শুরু হলেও তখন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিচারকার্য বিলম্বিত করেছিলেন নেতানিয়াহু। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২১ সালে মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়। হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে কিছু সময় স্থগিত থাকলেও সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর আবারও বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এটাই প্রথম দুর্নীতির মামলা—যা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। শুরু থেকেই তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা
























