২০০৯ সালের ২৫–২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রায় ১১ মাস অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশনের বিস্তৃত প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নানা তথ্য ও সাক্ষ্য পাওয়ার দাবি করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের পূর্বে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে গোপন বৈঠকে পুরো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় এবং তাপসের অফিস ও বাসায় এসব সমন্বয় বৈঠক একাধিকবার অনুষ্ঠিত হয়। এমন এক বৈঠকেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের অংশগ্রহণে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় বলে দাবি করেছে কমিশন। তাদের মতে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও কমান্ডোসহ মোট ২৪ জন ভারতীয় নাগরিক এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।
এছাড়া শেখ পরিবারের আরেক প্রভাবশালী সদস্য পলাতক শেখ সেলিমও পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজও পুরো পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত ছিলেন বলে কমিশনের দাবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের শেষ দিকে ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতের সহায়তায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পর দুই মাসের মধ্যেই সেনা অফিসারদের ধাপে ধাপে বিডিআরে পদায়ন করা হয়। রৌমারী, বড়াইবাড়ী ও পদুয়া সীমান্তে বিএসএফ সদস্য নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নেওয়া এবং বাংলাদেশের সেনা মনোবল দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হয়েছিল বলে কমিশনের মূল্যায়ন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রৌমারী ও পদুয়ার যুদ্ধ বিডিআরের ইতিহাসে এক বীরত্বগাঁথা অধ্যায়, যা ভারত কখনোই মেনে নিতে পারেনি।
৩৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপসের বাসায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের উপস্থিতিতে বিডিআরের কিছু সদস্য একাধিক বৈঠক করেন। প্রথমে অফিসারদের জিম্মি করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে সেটি পরিবর্তন করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০০৯ সালের এই মর্মান্তিক ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তা সহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। কমিশনের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান, এবং প্রতিবেদনটি গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।


























