ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িয়ে আনা বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগিয়ে ইতিহাস গড়লো জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০১:১৪:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৪২ বার পড়া হয়েছে

দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই হাত তালু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো কলেজ শিক্ষার্থী তাসফিন ফেরদৌসের। ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর কুড়িয়ে পাওয়া সেই দুই হাত সফলভাবে পুনঃস্থাপন করে দেশের চিকিৎসা ইতিহাসে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।

গত ৯ নভেম্বর গাজীপুরের টঙ্গিতে খেলা শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা তাসফিনের ওপর হামলা চালায়। এতে তার দুই হাত সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত তাকে টঙ্গী হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকায় পাঠানো হয়। টঙ্গী থেকে ঢাকা মেডিকেল হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার বেশি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে এবং বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নির্ধারিত সময়ও অতিক্রান্ত হয়।

তবুও হাল ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম শরীফের নেতৃত্বে সার্জারি টিম সাড়ে ২০ ঘণ্টা পর সফলভাবে তাসফিনের দুই হাত পুনঃসংযোজন করেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিরল ও যুগান্তকারী সাফল্যের তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, এত দীর্ঘ সময় পর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিরল এবং বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

তাসফিন ফেরদৌস আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমি কখনোই ভাবিনি আমার হাত ফিরে পাবো। আল্লাহর রহমত আর ডাক্তারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমার হাত আবার সচল হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করছি।”

তার মা আফরোজা সুমি জানান, প্রথমে তারা বিচ্ছিন্ন হাত খুঁজে পাননি। এম্বুলেন্সে ওঠার আগমুহূর্তে তা পাওয়া যায়। “আমি ভাবছিলাম আমার ছেলে বাঁচবে না। আজ তার হাত আবার ভালো হচ্ছে—এটা আল্লাহর রহমত আর ডাক্তারদের আন্তরিকতা,” বলেন তিনি।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, নিয়মিতই তারা বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছেন, কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকে দেরিতে হাসপাতালে আসেন। দ্রুত আনা গেলে অধিকাংশ রোগীকেই সুস্থ করা সম্ভব। তিনি শরীরের যে কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে সময় নষ্ট না করে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার অনুরোধ জানান।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

কুড়িয়ে আনা বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগিয়ে ইতিহাস গড়লো জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

আপডেট সময় ০১:১৪:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই হাত তালু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো কলেজ শিক্ষার্থী তাসফিন ফেরদৌসের। ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর কুড়িয়ে পাওয়া সেই দুই হাত সফলভাবে পুনঃস্থাপন করে দেশের চিকিৎসা ইতিহাসে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।

গত ৯ নভেম্বর গাজীপুরের টঙ্গিতে খেলা শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা তাসফিনের ওপর হামলা চালায়। এতে তার দুই হাত সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত তাকে টঙ্গী হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকায় পাঠানো হয়। টঙ্গী থেকে ঢাকা মেডিকেল হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার বেশি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে এবং বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নির্ধারিত সময়ও অতিক্রান্ত হয়।

তবুও হাল ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম শরীফের নেতৃত্বে সার্জারি টিম সাড়ে ২০ ঘণ্টা পর সফলভাবে তাসফিনের দুই হাত পুনঃসংযোজন করেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিরল ও যুগান্তকারী সাফল্যের তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, এত দীর্ঘ সময় পর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিরল এবং বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

তাসফিন ফেরদৌস আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমি কখনোই ভাবিনি আমার হাত ফিরে পাবো। আল্লাহর রহমত আর ডাক্তারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমার হাত আবার সচল হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করছি।”

তার মা আফরোজা সুমি জানান, প্রথমে তারা বিচ্ছিন্ন হাত খুঁজে পাননি। এম্বুলেন্সে ওঠার আগমুহূর্তে তা পাওয়া যায়। “আমি ভাবছিলাম আমার ছেলে বাঁচবে না। আজ তার হাত আবার ভালো হচ্ছে—এটা আল্লাহর রহমত আর ডাক্তারদের আন্তরিকতা,” বলেন তিনি।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, নিয়মিতই তারা বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছেন, কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকে দেরিতে হাসপাতালে আসেন। দ্রুত আনা গেলে অধিকাংশ রোগীকেই সুস্থ করা সম্ভব। তিনি শরীরের যে কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে সময় নষ্ট না করে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার অনুরোধ জানান।