ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন প্রর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক!

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৪:৩৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫২৫ বার পড়া হয়েছে

গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও তার পলায়নের পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হয়েছে। খুন, ছিনতাই ও টার্গেটেড হামলার মতো নৃশংস অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এসব ঘটনার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য এখন স্পষ্ট—অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে মাস্ককে কার্যত ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি সামাজিক মাধ্যমে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

মাস্ক পরা রহস্যময় তরুণ ও টার্গেটেড কিলিংয়ের শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর অপরাধগুলোতে মাস্কের ব্যবহার বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহের কেন্দ্রে রয়েছে মাস্ক পরা দুই তরুণ। ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ফয়সাল করিম মাসুদদাউদ খান নামের একজনের ছবি ঘুরছে।

হাদির ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের দাবি, গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগেই মাস্ক পরা ওই তরুণরা তাঁর গণসংযোগে নিয়মিত উপস্থিত ছিল। বারবার মাস্ক খুলতে অনুরোধ করা হলেও তারা রাজি হয়নি। সহযোদ্ধাদের সন্দেহ, তারা পরিকল্পিতভাবে হাদির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল—যা একটি রাজনৈতিক টার্গেটেড কিলিংয়ের আশঙ্কাকে আরও ঘনীভূত করে।

খুন থেকে ছিনতাই: মাস্ক যেন অপরাধের ‘ইউনিফর্ম’

মাস্ক ব্যবহার করে অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে—

  • মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর কন্যা নাফিসা (১৫) হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, বোরকা পরে ঢুকে খুনের পর স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বাসা ছাড়ে সে—অপরাধের প্রস্তুতিতে মাস্কের সচেতন ব্যবহার স্পষ্ট।
  • পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা: ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সামনে সাঈদ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা—খুনিরা ছিল মাস্ক পরা
  • রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: ফেনীর সোনাগাজীতে বিএনপি কর্মী আবুল হাশেম হত্যায় আসামিরা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে—বোরকা ও মাস্ক পরে পথরোধ করে হত্যাকাণ্ড চালায়।
  • ছিনতাই ও ডাকাতি: মগবাজার, পল্লবী ও মিরপুরে প্রকাশ্য ছিনতাই-ডাকাতিতে মাস্ক পরা দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে পালিয়েছে; মিরপুরে দিনদুপুরে মানি এক্সচেঞ্জ সহকারীর কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় এখনও রহস্য কাটেনি।

বিশেষজ্ঞ মত: সাময়িক নিয়ন্ত্রণ সময়ের দাবি

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, “জনস্বাস্থ্যগত অভ্যাস হিসেবে শুরু হলেও এখন মাস্ক অপরাধীদের জন্য সহজ ও সস্তা গোপন অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গুর হলে নির্বাচন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ অপরাধী শনাক্তে সহায়ক হতে পারে।”

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, “সমস্যার মূলে আছে শাসনের দুর্বলতা ও বিচারহীনতা। মাস্ক নিষিদ্ধই একমাত্র সমাধান নয়; তবে নির্বাচনকালীন সংবেদনশীল সময়ে ভিভিআইপি মুভমেন্ট ও স্পর্শকাতর এলাকায় নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যৌক্তিক হতে পারে।”

সামাজিক মাধ্যমে জনদাবি: ‘মাস্ক নয়, চাই নিরাপত্তা’

ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ‘মাস্ক নিষিদ্ধ করা হোক’ দাবি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন লিখেছেন, “কোভিড নেই, কিন্তু নিরাপত্তা নেই—নির্বাচন পর্যন্ত মাস্ক বন্ধ থাকলে অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়বে।” আরেকজনের ক্ষোভ, “মা-বোন খুন হচ্ছে, টাকা লুট হচ্ছে—সবাই মাস্ক পরে পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ঢাল ভাঙতেই হবে।”

দেশে চলমান নৈরাজ্য ও বিচারহীনতার আবহে মাস্কের অপব্যবহার অপরাধীদের উৎসাহিত করছে—এমন অভিযোগ জোরালো। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে মাস্ক ব্যবহারে সাময়িক বিধিনিষেধ বা লক্ষ্যভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে কি না—সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তই হয়তো অপরাধীদের মুখোশ খুলে জনআস্থা ফেরাতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারত আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দায় চাপিয়েছে জামায়াতের ওপর: গোলাম পরওয়ার

নির্বাচন প্রর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক!

আপডেট সময় ০৪:৩৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও তার পলায়নের পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হয়েছে। খুন, ছিনতাই ও টার্গেটেড হামলার মতো নৃশংস অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এসব ঘটনার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য এখন স্পষ্ট—অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে মাস্ককে কার্যত ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি সামাজিক মাধ্যমে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

মাস্ক পরা রহস্যময় তরুণ ও টার্গেটেড কিলিংয়ের শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর অপরাধগুলোতে মাস্কের ব্যবহার বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহের কেন্দ্রে রয়েছে মাস্ক পরা দুই তরুণ। ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ফয়সাল করিম মাসুদদাউদ খান নামের একজনের ছবি ঘুরছে।

হাদির ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের দাবি, গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগেই মাস্ক পরা ওই তরুণরা তাঁর গণসংযোগে নিয়মিত উপস্থিত ছিল। বারবার মাস্ক খুলতে অনুরোধ করা হলেও তারা রাজি হয়নি। সহযোদ্ধাদের সন্দেহ, তারা পরিকল্পিতভাবে হাদির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল—যা একটি রাজনৈতিক টার্গেটেড কিলিংয়ের আশঙ্কাকে আরও ঘনীভূত করে।

খুন থেকে ছিনতাই: মাস্ক যেন অপরাধের ‘ইউনিফর্ম’

মাস্ক ব্যবহার করে অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে—

  • মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর কন্যা নাফিসা (১৫) হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, বোরকা পরে ঢুকে খুনের পর স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বাসা ছাড়ে সে—অপরাধের প্রস্তুতিতে মাস্কের সচেতন ব্যবহার স্পষ্ট।
  • পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা: ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সামনে সাঈদ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা—খুনিরা ছিল মাস্ক পরা
  • রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: ফেনীর সোনাগাজীতে বিএনপি কর্মী আবুল হাশেম হত্যায় আসামিরা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে—বোরকা ও মাস্ক পরে পথরোধ করে হত্যাকাণ্ড চালায়।
  • ছিনতাই ও ডাকাতি: মগবাজার, পল্লবী ও মিরপুরে প্রকাশ্য ছিনতাই-ডাকাতিতে মাস্ক পরা দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে পালিয়েছে; মিরপুরে দিনদুপুরে মানি এক্সচেঞ্জ সহকারীর কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় এখনও রহস্য কাটেনি।

বিশেষজ্ঞ মত: সাময়িক নিয়ন্ত্রণ সময়ের দাবি

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, “জনস্বাস্থ্যগত অভ্যাস হিসেবে শুরু হলেও এখন মাস্ক অপরাধীদের জন্য সহজ ও সস্তা গোপন অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গুর হলে নির্বাচন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ অপরাধী শনাক্তে সহায়ক হতে পারে।”

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, “সমস্যার মূলে আছে শাসনের দুর্বলতা ও বিচারহীনতা। মাস্ক নিষিদ্ধই একমাত্র সমাধান নয়; তবে নির্বাচনকালীন সংবেদনশীল সময়ে ভিভিআইপি মুভমেন্ট ও স্পর্শকাতর এলাকায় নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যৌক্তিক হতে পারে।”

সামাজিক মাধ্যমে জনদাবি: ‘মাস্ক নয়, চাই নিরাপত্তা’

ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ‘মাস্ক নিষিদ্ধ করা হোক’ দাবি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন লিখেছেন, “কোভিড নেই, কিন্তু নিরাপত্তা নেই—নির্বাচন পর্যন্ত মাস্ক বন্ধ থাকলে অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়বে।” আরেকজনের ক্ষোভ, “মা-বোন খুন হচ্ছে, টাকা লুট হচ্ছে—সবাই মাস্ক পরে পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ঢাল ভাঙতেই হবে।”

দেশে চলমান নৈরাজ্য ও বিচারহীনতার আবহে মাস্কের অপব্যবহার অপরাধীদের উৎসাহিত করছে—এমন অভিযোগ জোরালো। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে মাস্ক ব্যবহারে সাময়িক বিধিনিষেধ বা লক্ষ্যভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে কি না—সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তই হয়তো অপরাধীদের মুখোশ খুলে জনআস্থা ফেরাতে পারে।