ঢাকা ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেল

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৩:৪২:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫২৩ বার পড়া হয়েছে

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র এক মাস আট দিন আগে। বুকভরা স্বপ্ন ছিল—মিশন শেষ করে দেশে ফিরে বাবার পৈতৃক ভিটায় গড়ে তুলবেন একটি সুন্দর বাড়ি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মাসুদ রানার। সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় বিদেশের মাটিতেই নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ, ভেঙে চুরমার হয়ে গেল একটি পরিবারের তিল তিল করে জমানো স্বপ্ন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হন মাসুদ রানা। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সংসারের হাল ধরেন মাসুদ। নিজের সুখ-শখ বিসর্জন দিয়ে বড় করেন ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম ও রনি আলমকে। শুধু তাই নয়, তাদেরও গড়ে তুলেছেন সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে। ভাইদের প্রতিষ্ঠা ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন—পৈতৃক ভিটায় একটি আধুনিক পাকা বাড়ি নির্মাণ—বারবার পিছিয়ে যায়।

সর্বশেষ যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত অবস্থায় সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেলে নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন মাসুদ রানা। পরিকল্পনা ছিল, মিশন শেষে ফিরলেই ঘুচবে অভাব, বাস্তবায়িত হবে স্বপ্নের বাড়ি। গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে বিদায় জানিয়ে তিনি সুদানের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় দেশের পতাকায় মোড়ানো কফিনই হয়ে উঠল তার শেষ ঠিকানা।

মাসুদের মৃত্যুর খবর প্রথম জানতে পারেন তার ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আলম। খবরটি গ্রামে পৌঁছাতেই বোয়ালিয়াপাড়া গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। শহীদের বাড়িতে এখন শুধুই কান্না আর আহাজারি।

শহীদ মাসুদ রানার মা মর্জিনা খাতুন ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার ছেলে ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রেখে যায়নি। যাওয়ার আগে বলেছিল দেশে ফিরে একটা সুন্দর বাড়ি করবে। গতকালই ফোনে কথা হলো। ডিউটির কষ্টের কথা জানতে চাইলে বলল—‘মা, এখন আর কষ্ট নাই, ডিউটি কম।’ আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেল।”

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, ভদ্র ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন গর্বের প্রতীক। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না।

রোববার বিকেলে শহীদ মাসুদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন নাটোর স্টেডিয়াম সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর। তিনি জানান, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শহীদের পরিবারের পাশে থাকবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষমতায় এলে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে: মির্জা ফখরুল

আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেল

আপডেট সময় ০৩:৪২:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র এক মাস আট দিন আগে। বুকভরা স্বপ্ন ছিল—মিশন শেষ করে দেশে ফিরে বাবার পৈতৃক ভিটায় গড়ে তুলবেন একটি সুন্দর বাড়ি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মাসুদ রানার। সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় বিদেশের মাটিতেই নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ, ভেঙে চুরমার হয়ে গেল একটি পরিবারের তিল তিল করে জমানো স্বপ্ন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হন মাসুদ রানা। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সংসারের হাল ধরেন মাসুদ। নিজের সুখ-শখ বিসর্জন দিয়ে বড় করেন ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম ও রনি আলমকে। শুধু তাই নয়, তাদেরও গড়ে তুলেছেন সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে। ভাইদের প্রতিষ্ঠা ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন—পৈতৃক ভিটায় একটি আধুনিক পাকা বাড়ি নির্মাণ—বারবার পিছিয়ে যায়।

সর্বশেষ যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত অবস্থায় সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেলে নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন মাসুদ রানা। পরিকল্পনা ছিল, মিশন শেষে ফিরলেই ঘুচবে অভাব, বাস্তবায়িত হবে স্বপ্নের বাড়ি। গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে বিদায় জানিয়ে তিনি সুদানের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় দেশের পতাকায় মোড়ানো কফিনই হয়ে উঠল তার শেষ ঠিকানা।

মাসুদের মৃত্যুর খবর প্রথম জানতে পারেন তার ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আলম। খবরটি গ্রামে পৌঁছাতেই বোয়ালিয়াপাড়া গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। শহীদের বাড়িতে এখন শুধুই কান্না আর আহাজারি।

শহীদ মাসুদ রানার মা মর্জিনা খাতুন ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার ছেলে ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রেখে যায়নি। যাওয়ার আগে বলেছিল দেশে ফিরে একটা সুন্দর বাড়ি করবে। গতকালই ফোনে কথা হলো। ডিউটির কষ্টের কথা জানতে চাইলে বলল—‘মা, এখন আর কষ্ট নাই, ডিউটি কম।’ আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেল।”

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, ভদ্র ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন গর্বের প্রতীক। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না।

রোববার বিকেলে শহীদ মাসুদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন নাটোর স্টেডিয়াম সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর। তিনি জানান, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শহীদের পরিবারের পাশে থাকবে।