ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইযোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার মূল আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোছা. হাসি বেগম ঢাকার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা জানান, ছেলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না এবং যোগাযোগও ছিল সীমিত। ফয়সাল সাধারণত অন্য জায়গায় থাকতেন, আর তারা মেয়ের বাসায় বসবাস করতেন। তবে ঘটনার দিন ফয়সাল তাদের জানিয়ে যান যে তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ফয়সালের মা–বাবা বলেন, ঘটনার দিন ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকে ফয়সাল কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। এমনকি ঘটনার আগের রাতেই তিনি শরিফ ওসমান হাদির পরদিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
তারা আরও জানান, ফয়সাল তিনটি বিয়ে করেছেন এবং একজন বান্ধবীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। ডেফোডিলে পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
জবানবন্দিতে বলা হয়, ঘটনার দিন হাদিকে গুলি করার পর ফয়সাল শেরেবাংলা নগরে তার বোনের বাসায় যান। ওই বাসায় তার বাবা–মা ও বোন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি ব্যবহৃত হুন্ডার মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করেন এবং আলামত ধ্বংস করেন। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাসা ছাড়েন। এ সময় তার বাবা পালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে দেন। বাসা ছাড়ার সময় ফয়সাল আবারও বলেন যে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর ফয়সালের বাবা–মাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তাদের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, ফয়সালকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই দিনে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার আব্দুল হান্নানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন শরিফ ওসমান হাদি। সেদিন জুমার নামাজ শেষে মতিঝিলে প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।




















