রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের হাতিনাদা গ্রামে দুই সেনাসদস্যের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৯ জুন) দুপুরে সংঘটিত এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য এবং বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক।
ভুক্তভোগী দুই সেনাসদস্য হলেন—কক্সবাজার রামু সেনানিবাসে কর্মরত তরিকুল ইসলাম এবং রাজশাহী সেনানিবাসে কর্মরত মো. আল-আমিন। তাঁরা চাচাতো ভাই। ঘটনার সময় তরিকুল ইসলাম ছুটিতে ছিলেন এবং নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
তরিকুল ইসলামের বাবা আবদুল হান্নান পুঠিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে, অজ্ঞাতনামা আরও কিছু ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানায়, এজাহারে চাঁদা দাবির কথা না থাকলেও ঘটনার উৎস হিসেবে পারিবারিক কথাকাটাকাটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তরিকুল ইসলামের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় আবদুল হান্নান ও তাঁর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ রফিকুল সোমবার দুপুরে তাঁর লোকজনসহ প্রথমে তরিকুলের ছোট ভাই তুষারকে মারধর করেন। এরপর কিছুক্ষণ পরই দেশীয় অস্ত্র ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা প্রথমে তরিকুলের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর আল-আমিনের বাড়ির কিছু জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। আতঙ্কে তরিকুলের পরিবার চাতালে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তরিকুল ইসলাম বলেন, “রফিকুল কয়েকবার সরাসরি চাঁদা চেয়েছেন। আমরা দেইনি বলেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন। দোকানে আমার ভাইকে মারার পরই তিনি আমাদের বাড়িতে হামলা চালান।”
তরিকুলের বাবা আবদুল হান্নান প্রশ্ন তুলেছেন, “রফিকুলের সঙ্গে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তাহলে কেন আমার বাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানো হলো?” তিনি বলেন, “আমার ছেলে তরিকুলকে ধরে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”
ঘটনার পর অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে যান এবং তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে। তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলছে এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনাটিকে প্রাথমিকভাবে কথাকাটাকাটির জের ধরে সংঘটিত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।