দেশের আর্থিক বাস্তবতা এখন চ্যালেঞ্জের। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে চলেছে, কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়ছে খুবই ধীরে। স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য সংসার চালানো প্রতিদিনই কঠিন হয়ে উঠছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা, বুদ্ধিদীপ্ত ক্রয়–ব্যবস্থাপনা ও কিছু অভ্যাসগত পরিবর্তন আনতে পারলে সীমিত আয়ের মধ্যেও স্বস্তিতে থাকা সম্ভব।
কী করবেন
১. প্রয়োজনীয় মুদিপণ্য বুদ্ধিদীপ্তভাবে কিনুন
-
মাসের শুরুতেই প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করুন।
-
চাল, ডাল, তেল, মসলা—এসব হোলসেল মার্কেট থেকে কিনলে খরচ কমে ১০–১৫% পর্যন্ত।
-
শাকসবজি কিনুন স্থানীয় হাটবাজার থেকে; সন্ধ্যার দিকে দাম আরও কম থাকে।
-
অবশ্যই ভালোভাবে দেখে, যাচাই করে ও দরদাম করে কিনবেন।
২. পোশাক কিনুন টেকসই, ব্যবহারিক, পরিকল্পিতভাবে
-
দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য দামি নয়, বরং টেকসই ও ভালো সেলাইয়ের কাপড় বেছে নিন।
-
ঈদ-পূজার মতো মৌসুমে অফার বা ডিসকাউন্ট কাজে লাগালে বাজেট বাঁচে।
-
খুব সস্তা কিন্তু নাজুক পোশাক বা জুতা দ্রুত নষ্ট হয়—দীর্ঘমেয়াদে এগুলোতেই খরচ বাড়ে।
-
একাধিক ট্রেন্ডি সোয়েটারের বদলে একটি ভালো মানের বহুমুখী সোয়েটার কেনাই বেশি লাভজনক।
-
কেনার আগে মূল্য তুলনা করে নিন—এই অভ্যাসে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমে।
৩. ঘরোয়া সরঞ্জাম কেনায় দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা
-
রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, ফ্যানের মতো বারবার ব্যবহৃত জিনিসগুলোর ক্ষেত্রে
একবার ভালো মানের পণ্য কিনলে তা দীর্ঘদিন টেকে। -
সস্তা সরঞ্জাম বারবার নষ্ট হয়ে মেরামত বা বদলাতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়।
৪. যাতায়াত খরচ কমানোর উপায়
-
কাছাকাছি দূরত্বে রিকশার বদলে হাঁটুন—স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
-
গাড়ি বা সিএনজির বদলে বাস, মেট্রোসহ গণপরিবহন ব্যবহার করুন।
-
প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত কমালেই মাসিক ব্যয় অনেক কমে আসে।
যা যা পরিহার করবেন
১. আকস্মিক বা হঠাৎ কেনাকাটা
অফার দেখলেই কেনার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কেনার আগে ভাবুন—এটি কি সত্যিই প্রয়োজনীয়?
২. নিয়মিত বাইরে খাওয়া
-
রেস্টুরেন্টের খাবার ব্যয়বহুল এবং অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর।
-
ঘরে রান্না করলে গুণগত মান ভালো থাকে ও খরচ কম হয়।
-
বাইরে খাওয়ার অভ্যাস কমালে মাসের হিসাব অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
৩. অনলাইন শপিংয়ের অতিরিক্ত আকর্ষণ
সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অর্ডার দিলে অপ্রয়োজনীয় খরচ বেড়ে যায়।
শুধু প্রয়োজন থাকলেই অর্ডার করুন।
যেভাবে মিতব্যয়ী হবেন
১. নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস
প্রতি মাসে ৫০০–১,০০০ টাকা হলেও আলাদা করে রাখুন।
মনে করুন—এটি আপনার মাসিক “অবশ্যক খরচ”।
দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস আর্থিক নিরাপত্তা তৈরি করে।
২. বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সতর্কতা
-
অপ্রয়োজনীয় ফ্যান-লাইট বন্ধ রাখুন।
-
গ্যাস কমানোর জন্য রাইস কুকার বা প্রেশার কুকার ব্যবহার করুন।
-
রান্নাঘর ও ঘরের যন্ত্রপাতিতে সচেতন ব্যবহারেই বড় সাশ্রয় সম্ভব।
৩. মিল–প্ল্যানিং করুন
সপ্তাহে কোন দিন কী রান্না হবে—আগেই ঠিক করে রাখুন।
এতে খাবারের অপচয় কমে, এবং বাজার খরচে শৃঙ্খলা আসে।
৪. পুরোনো জিনিস পুনরায় ব্যবহার করুন
-
পুরোনো পোশাক, নষ্ট আসবাব—যা সম্ভব পরিষ্কার বা মেরামত করে পুনর্ব্যবহার করুন।
-
রিসাইকেল করার অভ্যাসে খরচ কমে এবং স্থায়িত্ব বাড়ে।
তথ্যসূত্র: এক্সপেরিয়ান, সিঙ্ক্রনি

























