দীর্ঘ দশক ধরে যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে আফগানিস্তানকে বিশ্ববাসী চিনেছে সংকটের দেশ হিসেবে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবান প্রশাসনের অধীনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির ফলে নতুন এক চিত্র ফুটে উঠছে। বিদেশি পর্যটকরা আবারও দেশটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মাত্র এক মাসেই দুই হাজারেরও বেশি বিদেশি ভ্রমণকারী আফগানিস্তান সফর করেছেন, যা গোটা অঞ্চলের জন্যই ইতিবাচক সংকেত।
দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অনন্য আকর্ষণ হয়ে উঠছে। তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ, সবুজ উপত্যকা, আঁকাবাঁকা নদী আর দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ি দৃশ্য একে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। পাশাপাশি বামিয়ানের গুহা, প্রাচীন দুর্গ, মসজিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইতিহাস ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের টেনে আনছে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি বিদেশিদের ভ্রমণকে সহজ করেছে। দেশজুড়ে চেকপোস্ট ও টহল ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় নিরাপত্তা বেড়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত ও বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশাধিকারে সুবিধা সৃষ্টি করায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে নিমরোজ, হেরাত ও হাইরাতান স্থলবন্দর দিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভ্রমণকারী প্রবেশ করছেন। সড়ক, হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্র উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপও বিদেশি দর্শনার্থীদের আস্থা তৈরি করছে।
তালেবান প্রশাসন পর্যটন খাতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। তাদের বিশ্বাস, বিদেশি পর্যটক বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আফগানিস্তানের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে।
একসময় নিরাপত্তাহীনতার কারণে যে আফগানিস্তানকে বিদেশিরা এড়িয়ে চলতেন, সেই আফগানিস্তানই এখন পাহাড়, ইতিহাস ও অতিথিপরায়ণ মানুষের টানে পর্যটকদের আকর্ষণের নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। এতে স্পষ্ট হচ্ছে, দেশটি ধীরে ধীরে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ পেছনে ফেলে শান্তি, সৌন্দর্য ও সম্ভাবনার পথে এগোচ্ছে।