নেপালে জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ থেকে দেশটির ৭৭টি জেলার সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনআস্থা ভেঙে পড়ায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পঙ্গু হয়ে যায়। এই শূন্যতার মধ্যে কেবল নেপালি সেনাবাহিনীর ওপরই জনগণের আস্থা টিকে থাকে।
বিক্ষোভের প্রথম দিন থেকেই সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের সামনে তিনটি বড় দায়িত্ব এসে দাঁড়ায়—সংবিধান ও আইনের সীমার মধ্যে থেকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলকে সহযোগিতা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পথ তৈরি করা এবং সর্বোপরি সংবিধান রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে না পড়া নিশ্চিত করা।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, নেপালের ৯১ শতাংশ মানুষ সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখে। রাজনৈতিক দল ও পুলিশের প্রতি আস্থার তুলনায় এই হার অনেক বেশি। এই আস্থা সেনাবাহিনীকে দুইভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে—প্রথমত শান্তিরক্ষক হিসেবে, যাতে আন্দোলন অরাজকতায় না গড়ায়; দ্বিতীয়ত সংবিধানের রক্ষক হিসেবে, যাতে ক্ষমতার শূন্যতা রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে না ফেলে।
তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনে দুই দিনের বিলম্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সংবিধান অনুযায়ী, সেনা মোতায়েনের জন্য প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সুপারিশ প্রয়োজন। রাজনৈতিক দ্বিধা আর বিলম্বিত সিদ্ধান্তের কারণে আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করতে সক্ষম হয়।
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় সেনাপ্রধানের পেছনে ঝুলছিল নেপালি সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের ছবি। কেউ কেউ এটিকে রাজতন্ত্রপন্থার ইঙ্গিত বলে মনে করলেও সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি কেবল ঐতিহ্যের প্রতীক, কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের বিদ্রোহ আবারও দেখা দিতে পারে। তাই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে—সংবিধান রক্ষা, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে—অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করলে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে, আবার অতিরিক্ত সংযম দেখালে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়তে পারে।