ঢাকা ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক শাসকদের মৃত্যুদণ্ড: ভুট্টো–মোশাররফ থেকে সাদ্দাম—শেখ হাসিনার রায়ের আগে যে ইতিহাস

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৩:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৬৭২ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সাবেক শাসকদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার ঘটনা খুব বেশি নয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ের আগে উপমহাদেশে এমন রায় হয়েছিল পাকিস্তানের দুই সাবেক শাসক—জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে শুধু ভুট্টোর রায়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের।

ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড ও পরবর্তী প্রশ্ন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ১৯৭৭ সালে। দুই বছর পর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার অভিযোগে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। চার দশক পর, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, হত্যা মামলায় ভুট্টো ন্যায়সঙ্গত বিচার পাননি। ভুট্টো ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও ছিলেন।

মোশাররফের রায় কার্যকর হয়নি
২০১৯ সালে পাকিস্তানের আরেক সাবেক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে এই রায় ঘোষণা হয়।
মোশাররফ ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং ২০০১–২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
রায় ঘোষণার সময় তিনি চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছিলেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়—ফলে রায় কার্যকর হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে আলোচিত ফাঁসি—সাদ্দাম হোসেন
২০০৬ সালের ঈদুল আজহার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে।
১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা সাদ্দামকে অভিযুক্ত করা হয় দুজাইল শহরে শিয়া জনগোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড, ১৯৮৮ সালের হালাবজা গণহত্যা এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপরাধে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ২০০৪ সালে গ্রেপ্তার হন। ২০০৬ সালে রায় ঘোষণার পরই তা দ্রুত কার্যকর করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভুট্টো ও মোশাররফের রায়ের পর এবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করল। তবে রায়টির বাস্তবায়ন—অথবা আইনি আপিল—নিয়ে এখন দৃষ্টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন মাসুদের সহযোগী কবির আটক

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক শাসকদের মৃত্যুদণ্ড: ভুট্টো–মোশাররফ থেকে সাদ্দাম—শেখ হাসিনার রায়ের আগে যে ইতিহাস

আপডেট সময় ০৩:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সাবেক শাসকদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার ঘটনা খুব বেশি নয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ের আগে উপমহাদেশে এমন রায় হয়েছিল পাকিস্তানের দুই সাবেক শাসক—জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে শুধু ভুট্টোর রায়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের।

ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড ও পরবর্তী প্রশ্ন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ১৯৭৭ সালে। দুই বছর পর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার অভিযোগে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। চার দশক পর, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, হত্যা মামলায় ভুট্টো ন্যায়সঙ্গত বিচার পাননি। ভুট্টো ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও ছিলেন।

মোশাররফের রায় কার্যকর হয়নি
২০১৯ সালে পাকিস্তানের আরেক সাবেক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে এই রায় ঘোষণা হয়।
মোশাররফ ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং ২০০১–২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
রায় ঘোষণার সময় তিনি চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছিলেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়—ফলে রায় কার্যকর হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে আলোচিত ফাঁসি—সাদ্দাম হোসেন
২০০৬ সালের ঈদুল আজহার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে।
১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা সাদ্দামকে অভিযুক্ত করা হয় দুজাইল শহরে শিয়া জনগোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড, ১৯৮৮ সালের হালাবজা গণহত্যা এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপরাধে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ২০০৪ সালে গ্রেপ্তার হন। ২০০৬ সালে রায় ঘোষণার পরই তা দ্রুত কার্যকর করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভুট্টো ও মোশাররফের রায়ের পর এবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করল। তবে রায়টির বাস্তবায়ন—অথবা আইনি আপিল—নিয়ে এখন দৃষ্টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে।